অবশেষে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করলো ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলো ঢাকা। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পরে অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে থাকার আগ্রহের কথা জানালো বাংলাদেশ।

সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে দেওয়া এক চিঠিতে এসব আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এ কৌশলে বাংলাদেশকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। তবে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্রাটেজি বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। দীর্ঘ সে পর্যবেক্ষণ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন মাহমুদ আলীর উত্তরসূরী আবদুল মোমেন।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল নিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। আমরা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছি যে, বাংলাদেশ অবাধ ও মুক্ত এবং একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত একটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চায়। এ মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

প্রসঙ্গত, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। যা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি অংশ। এ সেন্টারে যোগ দিতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। তবে এ অঞ্চলের শক্তিধর রাষ্ট্র চীন ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এসব কর্মসূচিকে এক ধরনের অবরুদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে দেখছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র হওয়ায় সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেই এগুচ্ছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও দেওয়া চিঠিতে চিঠিতে ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দুই বড় প্রতিবেশী চীন ও ভারতের মাঝে অবস্থিত। এর সঙ্গে সামনে রয়েছে বিশাল মহাসাগর।

তিনি জানান, বাংলাদেশ অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাস করে। অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত একটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল, যেখানে আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি ও আদেশ মেনে অঞ্চলের সবার জন্য উন্নতি ও সুযোগ সৃষ্টি করবে।

তিনি জানান, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে জন্য দরকার টেকসই বিনিয়োগ। আর ইন্দো-প্যাসিফিক বিসনেজ ফোরামে শক্তিশালী অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বস্ত্রীক সুবিধাজনক সময়ের বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানান ড. মোমেন।

এছাড়া গণতন্ত্রের প্রচার, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে অভিন্ন লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করারও আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সূত্রমতে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। চীনকে অবরুদ্ধ করা নয়, বরং সমুদ্রে অবাধ চলাচল, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বাড়াতেই এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এ অঞ্চলে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার রয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী সব জাহাজের তথ্য বিনিময় করা হয়, যাতে সমুদ্র যাত্রায় কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। তারই আদলে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে এ সেন্টার খুলতে চায়। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো—জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা।