নিউজ ডেস্ক : ষাটের দশকের তুখোর ছাত্রনেতা ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ও ৬৪-৬৭ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি আজ (১৮ মে) ৭৬ বছরে পদার্পন করলেন।
রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৪৩ সনের ১৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে। বাবা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান। সুপ্রসিদ্ধ পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী রাশেদ খান মেননের ভাইদের মধ্যে মরহুম সাদেক খান, কিংবদন্তি কবি মরহুম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান, প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম এনায়েতুল্লাহ খান, বোন বেগম সেলিমা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক শহিদুল্লাহ খান বাদল। তার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খান, মেয়ে ড. সুবর্ণা খান ও ছেলে আইনের ছাত্র আনিক রাশেদ খান।
মেনন ৬২ সালে নিরাপত্তা আইনে প্রথম কারাবন্দী হবার পর ৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন মেয়াদে নিরাপত্তা আইন, দেশরক্ষা আইন ও বিভিন্ন মামলায় কারাবরণ করেন। ৬৭-৬৯ সালে জেলে থাকাকালীন মেনন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ক্যান্টনমেন্টে নীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জেলের বাইরে তার যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের দাবি করায় ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ও তার অনুপস্থিতিতে সামরিক আদালতে জনাব মেননের ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সম্পত্তির ষাট ভাগ বাজেয়াপ্তের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে কার্যকর করতে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার কাজ শুরু করেন। ২৫ মার্চ পল্টনের শেষ জনসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করলে রাশেদ খান মেনন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। ৫ দল হিসেবে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য পুনঃস্থাপনে রাশেদ খান মেনন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দলের ঐতিহাসিক ৩ জোটের ঘোষণার ভিত্তিতে ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন হয়। এতেও রাশেদ খান মেনন অন্যতম ভূমিকা রাখেন।
১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট নিজ পার্টি কার্যালয়ের সামনে গুলি করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মেনন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জাতীয় সংগ্রামেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৪ দলের ৩১ দফা নির্বাচনী সংস্কার ও ২৩ দফার নুন্যতম কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখেন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ২০০৮ সনের ৮ অক্টোবর রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তা থেকে বাংলামটর রোড পর্যন্ত এই সড়কের নাম রেখেছে রাশেদ খান মেনন সড়ক। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও গবেষণার কাজ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা, বিশেষ করে জাতীয় দৈনিকসমূহে তার নিয়মিত কলাম লেখায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার কলামসমূহ একত্রিত করে এ পর্যন্ত ৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে আজ বিকেল ৪টায় ওয়ার্কার্স পার্টি চত্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ নেতাকর্মীরা জন্মদিন উপলক্ষে জননেতা রাশেদ খান মেননকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবেন।