জুলহাজ-তনয় হত্যা মামলায় আসামি হচ্ছেন জিয়াসহ ৮ জন

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর কলাবাগানে সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যাকাণ্ডের তিন বছরের মাথায় অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোজিম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি )।
দেশজুড়ে জঙ্গি তৎপরতার মধ্যে ওই হত্যাকাণ্ডে ১৩ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে পাঁচজনের নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অভিযোগপত্রে আসামি করা হচ্ছে মোট আট জনকে।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের কথিত নেতা সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকও রয়েছেন আসামিদের মধ্যে, যিনি বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও অভিযুক্ত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান রোববার জানান, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়।

“এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন। অনুমোদন পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ নথিপত্র ও অভিযোগপত্র আদালতে পাঠানো হবে।”

দেশজুড়ে ‘উগ্রপন্থিদের’ একের পর এক হত্যা-হামলার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল কলাবাগানের লেক সার্কাস রোডের এক বাসায় ঢুকে ইউএসএইড কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু থিয়েটারকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত জুলহাজ মান্নান (৩৫) সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাত ভাই। তিনি সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন।

আর তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় (২৬) ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবেও তিনি কাজ করতেন।

ঘটনার রাতেই জুলহাজের ভাই মিনহাজ মান্নানের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে খবর এলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দেশীয় উগ্রপন্থিদের দায়ী করা হয়।

আসামি যারা

যে আটজনকে জুলহাজ-তনয় হত্যার অভিযোগপত্রে আসামি করা হচ্ছে তারা হলেন-

১. আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর বলে কথিত সৈয়দ জিয়াউল হক (৪২)।

২. আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখার প্রধান মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (২৫)।

৩. সংগঠনের সামরিক শাখার সমন্বয়ক মো. আরাফাত রহমান ( ২৪)।

৪. সংগঠনের ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান শেখ আব্দুল্লাহ (২৭)।

৫. সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্য আসাদুল্লাহ (২৫)।

৬. আকরাম হোসেন ওরফে আবির (৩০)।

৭. সাব্বিরুল হক চৌধুরী (২৬)।

৮. মো. জুনাইদ আহমদ ওরফে মাওলানা জুনেদ আহম্মদ ওরফে জুনায়েদ (২৬)।
এই আটজনের মধ্যে মোজাম্মেল, আরাফাত, আব্দুল্লাহ ও আসাদুল্লাহ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। আর জিয়া, আকরাম, সাব্বিরুল ও জুনাইদ পলাতক।

আসামিদের মধ্যে জিয়া, মোজাম্মেল, আরাফাত ও আকরাম বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি। সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে।

উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এ মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি অপরাধে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

“দীর্ঘ তদন্তে আসামিদের জবানবন্দি ও অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে জানা গেছে, আসামিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের সক্রিয় সদস্য। সংগঠনের নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হকের নির্দেশে সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্যরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।”
হদিস মেলেনি ৫ জনের

উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে ওই হত্যাকাণ্ডে ১৩ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পায় কাউন্টার টেরোজিম ইউনিট।

“তাদের মধ্যে ৫ জনের কেবল সাংগঠনিক নাম জানা গেছে। পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা পাওয়া না যাওয়ায় আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে এবং গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে সম্পূরর্ক অভিযোগপত্রের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলামও গত জানুয়ারিতে পাঁচজনের ঠিকানা না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

সে সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল ১৩ জন। ঘটনাস্থলে ছিল ৭ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন ভেতরে যায়। অর্থাৎ কিলিং মিশনে পাঁচজন ছিল।”

জুলহাজ-তনয়কে হত্যার পর খুনিরা পালানোর সময় ওই বাড়ির দারোয়ান পারভেজ মোল্লাও তাদের হামলার শিকার হন।

ওই সময় একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন কলাবাগান এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এএসআই মমতাজ; সেখানে একটি পিস্তল, একটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।

এএসআই মমতাজের ওপর হামলা এবং অস্ত্র পাওয়ার ঘটনায় আরেকটি মামলা করেন কলাবাগান থানার এসআই শমীম আহমেদ।