নিউজ ডেস্ক : আসন্ন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র ও দলের মহানগর সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেকের ওপরই ভরসা স্থানীয় আওয়ামী লীগের। অপর দিকে মহানগর সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পুরনো সমস্যা দেখা দিয়েছে গাজীপুর আওয়ামী লীগে। যদিও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করার কথা বলছেন স্থানীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, আগামী ৫ ও ৬ এপ্রিল মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বিতরণ করা হবে। আগামী ৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে কোথাও কোথাও কোন্দল থাকতে পারে। তবে নির্বাচনের আগে এসব কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। দলের সব নেতাকর্মীরা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামে সে ব্যবস্থা করা হবে।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে; এটা কোন্দল নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি সবাই আস্থাশীল।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রভাবের পাশাপাশি দলীয় কোন্দল স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে পরাজয়ের অন্যতম কারণ। সেই দিক থেকে খুলনায় ঐক্যের সুর দেখা যাচ্ছে। মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত। তাই মহানগর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে দুই সিটিতেই জয় লাভ করা সম্ভব।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ এক জরুরি বর্ধিত সভা করে। ওই সভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ১০ নেতার নাম প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবিত ১০ নেতার মধ্যে রয়েছেন- তালুকদার আবদুল খালেক, সাংসদ মিজানুর রহমান মিজান, কাজী এনায়েত হোসেন, শেখ সৈয়দ আলী, এম ডি এ বাবুল রানা, সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান পপলু, সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল ও শেখ সোহেল। পরে তালুকদার আব্দুল খালেককে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টির প্রতি সভায় উপস্থিত সবাই সমর্থন জানান। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি অন্য নয়জনের নামও পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় ওই সভায়। সে হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেকের ওপরই ভরসা স্থানীয় আওয়ামী লীগের।
এ প্রসঙ্গে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আমি সংসদ সদস্য আছি। সংসদীয় গণতন্ত্রে সংসদ সদস্য অন্য কোথাও যেতে হলে সংসদ নেত্রীর নির্দেশ লাগে। তাই এ বিষয়ে সংসদ নেত্রীর নির্দেশনা ছাড়া আমার পক্ষে কোনো কথাই বলা সম্ভব নয়। উনি দলের সভাপতি, দলের প্রয়োজনে আমাকে যা করার নির্দেশ দেবেন আমি তাই করবো। তবে আমার এ জায়গায় নির্বাচন করার কোনো রকম আগ্রহ নেই।
২০১৩ সালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট পেয়েও প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তালুকদার আব্দুল খালেক। জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের কোন্দলে বিগত সিটি নির্বাচনে তালুকদার আব্দুল খালেকের পরাজয়ের কারণ হিসেবে দেখা হয়।
জানা গেছে, আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো সভা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের একটি তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও মেয়র পদ নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না নগর আওয়ামী লীগে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী ও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ দায়িত্বে মনোনয়ন সংগ্রহ করবেন বলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দু’জনই প্রার্থী।
গাজীপুরে দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী আজমত উল্লাহ খান ছিলেন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র। স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় রাজনীতিতে স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত তিনি। সেই বিবেচনায় মেয়র পদে আজমত উল্লাহ খানকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
অপর দিকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের শহরে জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা। ভোটের রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে বেছে নেয়াটাই আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত করবে বলে তাদের দাবি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, দলের বিবেচনা করলে গাজীপুরে আজমত উল্লাহ খানের বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই। তার মতো পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা মনোনয়ন না পেলে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভোটে জেতার প্রশ্নে জাহাঙ্গীরকে বেছে নিলেও রাজনৈতিক দূরদর্শীতার প্রশ্নে তা হবে অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত। জনপ্রিয়তা থাকলেও ত্যাগের প্রশ্নে অনেকটা পিছিয়ে জাহাঙ্গীর আলম।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, আমি দীর্ঘদিন স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কাজ করেছি, টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলাম। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকেই আমি মাঠে কাজ করছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পার্টি যে সিদ্ধান্ত দেবে, আমি সেটা মেনে নেবো।
বিগত ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৩ লাখ ১২ হাজার ভোট পেয়েও প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক মান্নানের কাছে পরাজিত হন। আজমত উল্লাহ খানের হারের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকে দায়ী করেন অনেকে।
খুলনা ও গাজীপুর এ দুই সিটি করপোরেশনে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ আগামী ১২ এপ্রিল। ১৫ ও ১৬ এপ্রিল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। আর ভোট হবে ১৫ মে।
Be the first to comment on "খুলনায় ভরসা খালেক, যোগ্য-জনপ্রিয় দ্বন্দ্ব গাজীপুরে"