রূপগঞ্জকে হারিয়েই ১৯তম শিরোপা জয় আবাহনীর

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত ছিল যেন আবাহনীর। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যে মানের দল তারা গড়েছে, শুধু কাগজে-কলমেই নয়, আক্ষরিক অর্থেই শক্তিশালী দল ছিল তারা। তবুও, শিরোপা নিষ্পত্তি হয়েছে একেবারে শেষ ম্যাচে এসে।

যে কারণে একটু সংশয় লেগেই ছিল; কিন্তু মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির কাছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব হেরে যাওয়ার পরই নিশ্চিত হয়ে যায় ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনীর ১৯তম শিরোপা জয়। কারণ, তখন রুপগঞ্জের কাছে আবাহনী হেরে গেলেও রান রেটের ব্যবধানে জিতে যেতো ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।

শিরোপা নিশ্চিত জেনেই সম্ভবত ঢোল-বাদ্য নিয়ে বিকেএসপিতে হাজির হয়েছিল আবাহনীর সমর্থক গোষ্ঠি। তারা উদযাপন করেছে শিরোপা জয়। শেখ জামালের হেরে যাওয়ার পরও শেষ ম্যাচে নিজেদের বিলিয়ে দেয়নি মাশরাফি-নাসিরদের দল। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৯৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা উদযাপন করেছে তারা।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্ত আর নাসির হোসেনের অসাধারণ জোড়া সেঞ্চুরির ওপর ভর করে রূপগঞ্জের সামনে ৩৭৪ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করিয়ে দেয় আবাহনী। কয়েকদিন আগেই প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ৩৯৩ রানের বিশাল স্কোর গড়েছিল মাশরাফি-নাসিররা।

মাঝে এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে আবারও তারা মেতে উঠলো রান উৎসবে। এবার শিরোপা জয়ের ম্যাচে। যে ম্যাচটা আবাহনীর কাছে আক্ষরিক অর্থেই পরিণত হয়েছিল ফাইনালে। যদি নিজেরা হেরে যেতো এবং অন্যদিকে শেখ জামাল জিতে যেতো, তাহলে হয়তো শিরোপা জয়ই সম্ভব হতো না তাদের; কিন্তু সে শঙ্কা আর তৈরি হতে দিলেন না শান্ত-নাসিররা।

৯১ বলে ১২৯ রানের বিশাল স্কোর খেলেছেন আবাহনী অধিনায়ক নাসির হোসেন। ১৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কার মারও ছিল তার ব্যাটে। ১০৭ বলে ১১৩ রানের বড় ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে তার ব্যাটে ছিল ২টি ছক্কার মার। ৫১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে আউট হন এনামুল হক বিজয়। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। শেষ দিকে তো মাশরাফি বিশাল ঝড় তোলেন। মাত্র ৮ বল খেলে ২৮ রান তোলেন তিনি। ছক্কা মারেন ৪টি।

জবাব দিতে নেমে ৪২.৪ ওভারেই ২৮০ রান করে অলআউট হয়ে যায় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। আবাহনীর বোলাররা মোটামুটি সবাই সফল। ২ উইকেট করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সানজামুল ইসলাম, সন্দিপ রায় এবং নাসির হোসেন। ১ উইকেট নেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

৩৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার আবদুল মজিদের উইকেট হারিয়ে বসে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। অপর ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে গেলেও অন্য প্রান্তে মাত্র ১৩ রান করে আউট হয়ে যান অভিষেক মিত্র। জাতীয় দলের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম চেষ্টা করেন মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে দারুণ একটি জুটি গড়ার। কিন্তু ৯১ রানের জুটি গড়ার পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান দু’জন। ৫৪ বলে ৭০ রান করে আউট হয়ে যান মোহাম্মদ নাঈম। ৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

৬৬ বলে ৬৭ রান করেন মুশফিকুর রহীম। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান মুশফিক। মোহাম্মদ নাঈম আউট হওয়ার পর অধিনায়ক নাঈম ইসলামের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন মুশফিক। নাঈম ইসলাম খেলেন ৬৮ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি। এছাড়া ৫ বলে ৩০ রান করেন পারভেজ রাসুল।

দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন অধিনায়ক নাসির হোসেন। প্রথম রাউন্ড এবং সুপার লিগসহ আবাহনীর মোট পয়েন্ট দাঁড়াল ২৪। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এবং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের পয়েন্ট ২০ করে।

লিস্ট ‘এ’র মর্যাদা পাওয়ার পর (২০১৩ সালে) ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এটা ছিল ৫ম আসর। এর মধ্যে আবাহনীই শিরোপা জিতেছে ২ বার। ২০১৬ সালের পর ২০১৭ বাদ দিয়ে এবার (২০১৮ সালে) আবারও জিতলো তারা। ২০১৭ সালে জিতেছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।

২০১৩ সালে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর এ নিয়ে ৫ আসরের মধ্যে ২বার শিরোপা উঠেছে আবাহনীর ঘরে। গাজীও জিতেছে দু’বার। তবে ২০১৩-১৪ মৌসুমে গাজী জিতেছিল গাজী ট্যাঙ্ক নামে। ২০১৭ সালে জিতেছে গাজী গ্রুপ ক্রিকোর্স নামে। আরেকবার শিরোপা উঠেছে প্রাইম ব্যাংকের শো কেসে।

ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ও প্রিমিয়ার লিগ মিলে, আবাহনী এবার নিয়ে রেকর্ড ১৯তম শিরোপা জিতল। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৯ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ জিতেছে মোট ৬বার।

Be the first to comment on "রূপগঞ্জকে হারিয়েই ১৯তম শিরোপা জয় আবাহনীর"

Leave a comment

Your email address will not be published.




seventeen − five =