নিউজ ডেস্ক : রাতদিন এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে টাকা, রক্ত ও ঔষধসহ যাবতীয় ব্যবস্থা করেও তিন বন্ধু হাফিজ, দীপ্ত ও শাহিনের কাউকে বাঁচানো গেল না। ২০-২৫ জন বন্ধু সর্বদা তাদের বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও বন্ধুদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে তারা চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বলা হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর কথা। যারা ময়মনসিংহের ভালুকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে প্রহর গুণছিলেন গত পাঁচদিন।
তাদের সুস্থতায় নির্ঘুম রাত অার ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করেছেন সহপাঠীরা। তবে মৃত্যুর কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে তাদের। নিভে গেছে হাফিজ, দীপ্ত ও শাহিনের উজ্জ্বল জীবনের অালো। এক টুকরো বিস্ফোরণের অাগুনে মৃত্যুকে অালিঙ্গন করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
গত ২৪ মার্চ রাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি ছয়তলা ভবনের তৃতীয় তলায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান ও দীপ্ত সরকার। একই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান আরেক সহপাঠী তাওহীদুল ইসলাম। বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তারা চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
তাদের এমন মৃত্যু যেন অাশার মাঝে নিরাশার অন্তরীন। শাহীন মিয়া, হাফিজুর রহমান, দীপ্ত সরকার ছিলেন নিম্নবিত্ত পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাদেরকে ঘিরেই পরিবারগুলো শূন্যতার মাঝে পূর্ণতার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তুু সব আশা অার পূর্ণতার প্রত্যাশা মিশে গিয়েছে হতাশার বালুচরে। স্বজনদের চোখে-মুখে এখন শুধু দীর্ঘঃশ্বাস।
নিজেদের অসহায় নিম্নবিত্ত পরিবারের হাল ধরার অাশায় গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েটে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কয়ার ফ্যাশন কারখানায় শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তারা। প্রত্যাশা ছিল একমাস পর বস্ত্র প্রকৌশলের স্বীকৃতি নিয়ে বের হবেন। একমাসের জন্য ওই পোশাক কারখানার পাশে মাস্টারবাড়ি এলাকার ছয়তলা ভবনের তিনতলায় চার বন্ধু মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন।
কিন্তু ২৪ মার্চ দিনগত রাত ১টার দিকে ওই বাসার সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ হন তারা এবং তাওহীদুল ইসলাম নামে অারও একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। দগ্ধ তিনজন দীপ্ত, হাফিজ এবং শাহিনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ও পরে ঢামেক হাসতালে ভর্তি করা হয়। টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গতকাল বুধবার দিনগত রাতে না ফেরার দেশে চলে যান শাহিন মিয়া। এরপর মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন অপর দু’জনও। হাফিজ বৃহস্পতিবার দিনগত রাত দেড়টায় ও শুিক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিকে দীপ্ত মারা যান।
এ বিষয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির জাতীয় প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শুরু থেকেই তাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল। শাহিনের ৮৩ শতাংশ, দীপ্তের ৫৪ এবং হাফিজের ৫৮ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিল। এ ধরনের রোগীকে বাঁচানো খুবই ক্রিটিকেল। তবুও অামরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তুু তারা চলে গেলেন।
Be the first to comment on "বন্ধুদের ভালোবাসা উপেক্ষা করে ওরা চলে গেলেন"