চোখের জলে শাহীনকে শেষ বিদায়

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া শাহীন বেপারীর মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগীর সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে রাত সাড়ে ৯টায় শাহীন বেপারীর নিথর দেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পূর্বপাড়া পাগলাবাড়ি এলাকার তার ভগ্নিপতি আজিজ মাদবরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় শাহীন বেপারীর আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার শত শত লোকজন মরদেহ দেখতে ভিড় করে। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এ সময় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শাহীন বেপারীর মরদেহ দেখে শাহীনের বৃদ্ধা মাতা জাহানারা বেগম, স্ত্রী রীমা আক্তার বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শাহীনের একমাত্র মেয়ে সূচনা বাবার শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সূচনা সিদ্ধিরগঞ্জ দ্যুত উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। রাত ১১টার দিকে শাহীন বেপারীর মরদেহ দাফনের উদ্দেশ্যে মিজমিজি পাইনাদী করবস্থান কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার নামাজে জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ দাফন করা হয়।

মিজমিজির পূর্বপাড়ার ভগ্নিপতির বাসায় শাহীন বেপারীর ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন চঞ্চল বেপারী বলেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পর আমার ভাই ভালো ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু রোববার অস্ত্রোপচারের পর থেকেই আমার ভাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর কোনো কথা বলতে পারেননি। অপারেশনের পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ডাক্তার তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছুই জানায়নি। সোমবার বিকেলে আমাদেরকে জানানো হয় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। পরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, তারা যদি আমার ভাইয়ের অবস্থার অবনতির কথা আগে জানাতো তাহলে আমরা তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।

শাহীনের ফুফু নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, শাহীনের বাবা সাইফুল ইসলাম শাহীনসহ তার ভাই-বোনদের ছোট রেখেই মারা যান। অনেক কষ্ট করে চার মেয়ে ও দুই ছেলেকে শাহীনের মা জাহানারা বেগম লালন-পালন করেছেন। যখন শাহীন আয়-রোজগার করছে তখনই আল্লাহ তাকে নিয়ে গেছেন।

শাহীনের প্রতিবেশী ও শাহীনের মেয়ে সূচনার সহপাঠীর বাবা লিটন জানান, শাহীন বেপারী খুব ভালো মানুষ ছিলেন। নেপালে যাওয়ার দু’দিন আগেও তার সঙ্গে শেষ বারের মতো কথা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা বিমানের একটি ফ্লাইট নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহীর মধ্যে ৪৯ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জন। আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে শাহীন বেপারী সোমবার মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন। বাকি ৯ জনের মধ্যে ৬ জন ঢামেকে, দুইজন সিঙ্গাপুরে ও একজন ভারতের দিল্লিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শাহীন বেপারী বাংলাদেশ শান্তি সংঘের সদস্য ও ঢাকার সদর ঘাট এলাকার বিক্রমপুর গার্ডেন সিটিতে মেসার্স করিম অ্যান্ড সন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

Be the first to comment on "চোখের জলে শাহীনকে শেষ বিদায়"

Leave a comment

Your email address will not be published.




5 + 18 =