আমৃত্যু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : সংবিধান সংশোধন করে চীনের সংসদ দেশটির প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত মেয়াদ সীমা অবলুপ্ত করেছে। ফলে আমৃত্যু চীনের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন শি জিনপিং।

রবিবার সংবিধান সংশোধনের ভোটে জিনপিংয়ের পক্ষে পড়েছে ২ হাজার ৯৫৮টি ভোট; যেখানে তার বিপক্ষে পড়েছে দু’টি এবং তিনজন প্রতিনিধি ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।

১৯৯০ সালের দিকে চীনের একজন প্রেসিডেন্ট ৫ বছর করে সর্বোচ্চ দু’বারের জন্য নির্বাচিত হতে পারতেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা তুলে দেয়ার প্রস্তাব তোলে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ ছিল শি জিনপিংয়ের।

আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল সংবিধান সংশোধন করতে জিনপিংকে কোনো বেগ পেতে হবে না। কারণ, কাগজে-কলমে কংগ্রেসই হলো চীনের সবচেয়ে বড় আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। কিন্তু এটাকে স্রেফ একটা কাঠের পুতুল বলেই মনে করা হয়, কারণ, যেমন নির্দেশনা থাকে কংগ্রেস সেভাবেই সব অনুমোদন করে থাকে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে এর ব্যত্যয় ঘটেওনি কখনও।

রোববার সংবিধান সংশোধনীর উদ্দেশ্যে আয়োজিত ভোটে প্রথম ভোটটিই দেন শি জিনপিং। লাল একটি বক্সে প্রতিটি ব্যালট পেপার পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে তালি দিয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা বিলুপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা।

২০৫০ সালের মধ্যে চীনকে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে সুপারপাওয়ারে পরিণত করার স্বপ্ন লালন করেন শি। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ পরিষ্কার করে নিজের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।

তবে চীনের সংবিধান সংশোধনের এ ঘটনা নিয়ে বেশ সমালোচনাও হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই শি জিনপিংকে বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করছেন। এক সমালোচক এ ঘটনাকে জনমতবিরোধী হাস্যকর প্রস্তাব বলে উল্লেখ করেছেন।

রাষ্ট্রীয় একটি গণমাধ্যমের সাবেক সম্পাদক লি দাতং বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা বাড়ানোর ঘটনা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি এটা আর সহ্য করতে পারছি না। আমি এ বিষয়ে আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আমরা খুবই ক্রুদ্ধ। এ বিষয়ে আমাদের জোরালো মতামত তুলে ধরতে হবে।

শি জিনপিংয়ের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ঘটনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, আজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট, আমি মনে করি এটা মহৎ। কোনো একদিন আমরাও এমন কিছু পাব।

গত অক্টোবরে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বৈঠক কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের শেষের দিকে ‘শি জিনপিংয়ের ভাবনা’কে দলীয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে একচেটিয়া ভোটে সবাই সম্মতি জানায়। এর মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের কাতারে চলে আসেন শি জিনপিং। তার ভাবনা চীনকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। ২০১২ সালে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে তার ক্ষমতা দৃঢ়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সরকারি কারখানার শ্রমিকরা এখন থেকে ৯ কোটি কমিউনিস্ট পার্টির সদ্যস্যের তালিকায় যোগ দেবে। দলীয় সব সদস্যকেই এখন থেকে চীনা বৈশিষ্ট্যে সমাজতন্ত্রের নতুন যুগে শি জিনপিংয়ের ভাবনা পাঠ করতে হবে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন শি জিনপিং। দুর্নীতির অভিযোগে নিজের দলের ১০ লাখের বেশি সদস্যকে শাস্তি দিয়েছেন তিনি। এর মাধ্যমেই শি জিনপিংয়ের জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

সূত্র: এএফপি ও বিবিসি।

Be the first to comment on "আমৃত্যু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং"

Leave a comment

Your email address will not be published.




four × five =