মাতৃভাষার সুরক্ষার সুর পাকিস্তানে

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষার সুরক্ষার সুর উঠেছে পাকিস্তানে। দেশের উন্নয়নে মাতৃভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রের উন্নয়নে মাতৃভাষা গোপন রহস্য হিসেবে কাজ করে। বাঙালি ও বাংলার মানুষের মাতৃভাষার দাবিকে নস্যাৎ করতে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বুলেটে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। সেই পাকিস্তানের বর্তমান শাসকরা বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন একটি ভালো ঐতিহ্য।

বুধবার মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার পাকিস্তান আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) কেন্দ্রীয় মহাসচিব মিয়া ইফতিখার হুসাইন বলেন, ‘একটি জাতির উন্নয়নে মাতৃভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

মাতৃভাষা দিবসের বার্তায় পাকিস্তানের এই রাজনীতিক বলেন, ‘প্রাচীন ও আধুনিক শিক্ষা গবেষক, দার্শনিক এবং বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যাপারে একমত যে শিশুদেরকে শিক্ষা দেয়া উচিত মাতৃভাষায়। এটা আধুনিক রাষ্ট্রের উন্নয়নের গোপন রহস্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপন একটি ভালো ঐতিহ্য। দেশজুড়ে মাতৃভাষার প্রসার ঘটানোর জন্য এটিকে পুরোমাত্রার আন্দোলনে পরিণত করা উচিত। এটা এখন সময়ের দাবি।

পশতু ভাষার উল্লেখ করে মিয়া ইফতিখার দাবি করেন, পশতু এখন পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষার প্রয়োগের জন্য একটি আন্দোলন শুরু করা যেতে পারে। এ পদক্ষেপে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারে।

এদিকে তেহরিক-ই-উর্দু নামের একটি সংগঠন সোমবার ‘কারওয়ান-ই-উর্দু’ শিরোনামে দেশটিতে র্যালি করেছে। এসময় দেশটিতে উর্দুকে সরকারি ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানায় তারা। পাঞ্জাবের সুহুদা থেকে শুরু হয়ে সমাবেশটি রাজ্যের বিধানসভার সামনে গিয়ে শেষ হয়।

অন্যদিকে, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরীফ বলেছেন, মাতৃভাষার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ যৌথ সামাজিক দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, এই আধুনিক যুগে মাতৃভাষার গুরুত্ব উপেক্ষা করা যাবে না। ভাষা শুধুমাত্র যোগাযোগ এবং চিন্তা-ভাবনার প্রকাশের হাতিয়ার নয়। ভাষার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিকে শনাক্ত করা যায়।

‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসাবে স্বীকৃত মাতৃভাষা। বিভিন্ন ধরনের শব্দ ও বাক্য শত শত বছর ধরে মানব সভ্যতা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ তুলে ধরেছে।’

পাঞ্জাবের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা সমাজের এমন একটি বৈশিষ্ট যা প্রত্যেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায় এবং সামাজিক ঐতিহ্য লালন এবং প্রচারের সবচেয়ে কার্যকর উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়।

মাতৃভাষাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার বলেও মন্তব্য করেছেন শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেন, মাতৃভাষার গুরুত্ব কখনোই উপেক্ষা করা যায় না।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি ওঠে দেশভাগের পরপরই। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে আন্দোলনে রূপ নেয়, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চরম প্রকাশ ঘটে।

ওইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ বেশ কয়েকজন হতাহত হন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশ নেয়।

ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যেই মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুড়িয়ে দেয়।

২১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে এবং ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

সূত্র : ডেইলি পাকিস্তান, পাকিস্তান ট্যুডে।

Be the first to comment on "মাতৃভাষার সুরক্ষার সুর পাকিস্তানে"

Leave a comment

Your email address will not be published.




one + 19 =