বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস রোধ সম্ভব নয়: সচিব

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : বর্তমান পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

 

সবার মতামত নিয়ে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে জানালেও আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নিতে পারেননি তিনি।

প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় এই পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয় বলে বুধবার এক অনুষ্ঠানে নিজের মত দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার সচিব সোহরাব সাংবাদিকদের বলেন, এখন যে পরিস্থিতি সেই পরিস্থিতিতে সকলে মিলে একটা উপায় বের করতে হবে, যে প্রক্রিয়া প্রশ্ন আউটের কোনো ব্যাপার থাকবে না। সেই প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করার জন্য সকলে মিলে এগিয়ে আসতে হবে।

সচিবের এই বক্তব্যের আগেই হাই কোর্ট একটি রুল দিয়েছে; যাতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, সে কারণ জানতে চাওয়া হয়। এই জবাব শিক্ষা সচিবকেও দিতে হবে।

রুলের বিষয়ে সোহরাব বলেন, আদালত যে আদেশ দেবে আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করব। আমাদের কোনো নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সেই বিষয়ে আমাদের বক্তব্য অবশ্যই আদালতের কাছে উপস্থাপন করব।

বর্তমান প্রশ্ন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার স্বাভাবিক’ মন্তব্য করে সোহরাব বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের নতুন এমন কোনো প্রক্রিয়া এমন কোনো পদ্ধতিতে যেতে হবে যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ থাকবে না।

সেজন্য মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিগতভাবে আমি কাজ করছি। আমি অবিলম্বে এটি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দেব। এটি হয়ত সভা, সমাবেশ, সেমিনার করে, আমাদের যারা গুণী ব্যক্তিরা আছেন তাদেরকে নিয়ে বসে যদিও সেখান থেকে বা নতুন কোনো পথ যদি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় তাহলে পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব।

সচিব বলেন, “এখন প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত মহূর্তের মধ্যে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। যদি ইন্টারনেট না থাকত তবে ফাঁস হলেও সেটি এতবড় সর্বনাশ হত না। সেটি সীমিত, হয়ত কেউ জানতেই পারত না।
আমরা যখন ইনকোয়ারি করেছি, মনে হয়েছে প্রতি বছরই হয়ত এ রকম ঘটনা ঘটেছে, আগে মানুষের নৈতিকতা আদর্শবোধ অনেক তীক্ষ্ণ ছিল, তখন কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেলেও নিজের বন্ধুকেও বলত না, ভাবত মানুষ আমাকে নোংরাভাবে দেখবে, খারাপভাবে দেখবে। এখন তো অন্যরকম হয়ে গেছে। এখন গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে সবাই এরমধ্যে ইনভলব হয়ে যাচ্ছে।”

প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যে কোনো উপায়ে এর রুটে পৌঁছাতে চায়।

প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে আগের ঘোষণার বিষয়ে সচিব বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে তারা সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, কত পারসেন্ট ক্ষতি হয়েছে সেটা সম্পর্কে তারা একটা সুপারিশ করবেন। সুপারিশ করার পর, কী কী সুপারিশ করেছেন তা একটি বড় কমিটি বসতে পারে বা প্রশাসনিকভাবে দেখতে পারে বা শিক্ষামন্ত্রী যদি অন্য কাউকে ইনভলব করে যদি দেখেন সবার মতামত নিয়ে কীভাবে করা যায়। এটা একটা বড় সিদ্ধান্ত।

আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষার বাতিলের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এবার দেরি কেন- এই প্রশ্নে সোহরাব বলেন, “আগে আগের দিন প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। …ট্রেজারি অফিসার যদি সবাইকে নিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পান তবে ওই প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয় না।”

সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় প্রশ্ন না ছাপিয়ে সকাল ১০টায় সব কেন্দ্রের স্ক্রিনে একযাগে প্রশ্ন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান সচিব।

“আমাদের চিন্তা প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিটি পরীক্ষা কক্ষে স্ক্রিন থাকবে। ১০টার সময় ওটা ওপেন হবে, প্রশ্ন ছাপানোরও প্রয়োজন নেই। পর্দায় দেখে দেখে পরীক্ষা দেবে। সেটা করতে পারলে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ থাকবে না। সেটা করতে গেলে বিশাল ধরনের কেন্দ্র সংখ্যা, কেন্দ্রের যে পরিস্থিতি সেটা এখনও ওই পর্যায়ে যেতে পারি নাই।”

সোহরাব বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার অবস্থাটা এমন প্রতিরাত, প্রতিদিন এভাবে আমার কাটছে। আমার সমস্ত কিছুর মূলে আছে যে কীভাবে অবশিষ্ট পরীক্ষাটা ভালো দেওয়া যায় এবং যা হয়ে গেছে সেটা কীভাবে তদন্ত করে অপরাধীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা যায়। এরমধ্যে আমার সারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এটা ঘুরপাক খেলে তো যে ক্ষতি হয়ে গেছে সেটা পুনরূদ্ধার হচ্ছে না। তাই বলে এই পরীক্ষা তো শেষ নয়। প্রতি বছর পরীক্ষা। এক মাস পরে আরেকটি পরীক্ষা আছে।”

আগামী পরীক্ষা নিয়ে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো অবস্থায় নাই’ উল্লেখ করে সচিব বলেন, “আমি বার বার বলছি যে বাস্তবতা হচ্ছে এখানে ৩০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সংশ্লিষ্ট। ৩০ হাজারের মধ্যে আমি মনে করি যে এক্কবারে সবাই অনেস্ট ও সিনসিয়ার। কিন্তু দু’চারজনও … যদি এই জঘন্য অপকর্মটি করেন তাহলে প্রত্যেকের সততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, সততার কোনো মূল্য থাকছে না আর।

Be the first to comment on "বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস রোধ সম্ভব নয়: সচিব"

Leave a comment

Your email address will not be published.




nine − six =