নিউজ ডেস্ক : পিচ বোলিং বান্ধব, স্পিনারদের বল টার্ন করছে। উইকেটে বেশি সময় টিকে থাকাই দায়। তাই বলে আড়াই দিনে খেলা টেস্ট ম্যাচ শেষ। বাস্তবে তাই হল। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার পাঁচদিনের ম্যাচ শেষ হল আড়াই দিনে। স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ২১৫ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে সিরিজও নিজের করে নিয়েছে সফরকারী শ্রীলঙ্কা।
চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ কখনও তিনশোর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা। আর ঘরের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে একবারই। ২০১৪ সালে মিরপুরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল ৩ উইকেটে। তবে শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে নতুন ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশকে করতে হবে ৩৩৯ রান।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হল না। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে গেলেন তামিম ইকবাল। দিলরুয়ান পেরেরার অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল পা বাড়িয়ে খেলেন তামিম। বলে-ব্যাটে করতে পারেননি। প্যাডে আঘাত হানলে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন তামিম। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
তামিমের বিদায়ের পর অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করতে থাকে ইমরুল কায়েস। আগের বলে হেরাথকে ছয় মারার পরের বলে ডিকভেলাকে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এদিকে লাঞ্চ থেকে ফিরেই সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল। হেরাথের বলে ডিকভেলাকে ক্যাচ দেন আগের টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা এই তারকা।
মুমিনুলের বিদায়ের পর দ্রুত বিদায় নেন লিটন। বোলিংয়ে এসেই উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান আকিলা ধনঞ্জয়া। এই স্পিনারের কুইকার ডেলিভারি পিছিয়ে গিয়ে ডিফেন্স করেছিলেন লিটন। বাড়তি বাউন্সের জন্য ব্যাটে খেলতে পারেননি। গ্লাভসে লেগে ক্যাচ যায় শর্ট লেগে। সুযোগ হাতছাড়া করেননি কুশল মেন্ডিস।
এক ওভার বিরতিতে দিয়ে টাইগার শিবিরে আবার আঘাত হানেন ধনঞ্জয়া। এই অফ স্পিনার ফিরিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহকে। এগিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় প্রথম স্লিপে করুনারত্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহর সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর। হেরাথের বলে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বল মিস করেন মুশফিক। দ্রুত স্ট্যাম্প ভেঙে দেন ডিকভেলা।
মোসাদ্দেকের পরিবর্তে মাঠে নেমে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হন সাব্বির। ধনঞ্জয়ার বলে ক্যাচ দেন শর্ট লেগে। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দিলেন আব্দুর রাজ্জাক (২), মিরাজ (৭) ও তাইজুলরা (৬)। ফলে ১২৩ রানেই থামে টাইগারদের ইনিংস।
এর আগে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০০ রান নিয়ে ম্যাচের তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে লাকমলকে সঙ্গে নিয়েই প্রায় এক ঘণ্টা (৫১ মিনিট) ব্যাট করেন রোশেন সিলভা। মিরাজ-মোস্তাফিজদের দেখে শুনে খেলে দুইজনে মিলে নবম উইকেটে গড়েন ৪৮ রানের জুটি।
এরপর বোলিংয়ে এসে ২১ রান করা লাকমলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তাইজুল। পরের বলেই হেরাথকে এলবিডব্লিউ করেন এই স্পিনার। এতেই শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ২২৬ রানে। রোশেন সিলভা ৭০ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশকে ১১০ রানে অলআউট করে ১১২ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দেখে শুনেই শুরু করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই কুশল মেন্ডিসকে (৭) ফিরিয়ে দেন রাজ্জাক। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মেন্ডিস। বলে-ব্যাটে করতে পারেননি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর পর রিভিউ নিয়েছিলেন। তাতে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি।
মেন্ডিসের বিদায়ের পর উইকেটে এসেই আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে ব্যক্তিগত ২৪ বলে ২৮ রান করে থামে এই ব্যাটসম্যান। তাইজুলের মিডল স্টাম্পে পিচ করা বল ডিফেন্স করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল লাগে স্টাম্পে।
এরপর গুনাথিলাকাকে সাজঘরে ফিরিয়ে লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের বলের লাইন বুঝতে পারেনি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। অফ স্টাম্পে সরে গিয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করলে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। ফলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান ১৭ রান করে।
উইকেটে প্রায় থিতু হয়ে যাওয়া দিমুথ করুণারত্নেকে সাজঘরের পথ দেখান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩২ রান করে ইমরুল কায়েসের ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর পঞ্চম উইকেটে ৫১ রানের একটি জুটি গড়েন দিনেশ চান্দিমাল আর রোশন সিলভা। দারুণ খেলতে থাকা চান্দিমালকেও (৩০) এলবিডব্লিউ করে ফেরান মিরাজ।
এরপর ১০ রান করে তাইজুলের শিকার নিরোশান ডিকভেলা। ৫৬তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত মোস্তাফিজুর রহমানের। ওভারের দ্বিতীয় আর তৃতীয় বলে দিলরুয়ান পেরেরা (৭) আর আকিলা ধনঞ্জয়াকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বাঁহাতি এই কাটার মাস্টার। হ্যাটট্রিক বলটা আটকে দেন সুরাঙ্গা লাকমল।
তবে পরের বলেই আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন মোস্তাফিজ। এবার প্রথম স্লিপে সাব্বির রহমান ক্যাচ ফেলে দেন লাকমলের। আঙুলে ব্যথাও পান সাব্বির। প্রাথমিক চিকিৎসার পর আবারও ফিল্ডিংয়ে দাঁড়ান। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২২২ রান করে সফরকারী শ্রীলঙ্কা।
Be the first to comment on "ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশের হার"