নিউজ ডেস্ক : অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলাকে ’পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ভয়াবহ নিষ্ঠুর হামলা’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিল। গ্রেনেড হামলার পর যখন জানতে পারে যে, আমি বেঁচে আছি, তখন সেই রাতেই হামলাকারী তাজউদ্দিনসহ আরও কয়েকজনকে ক্ষমতাসীনরা দেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। ভয়াবহ এই হামলা মামলাটি মোট ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও গ্রেনেড হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া বেগম নাসিমা ফেরদৌসীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিরোধী দল চিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এই হামলায় মহিলা লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আহত শত শত দলীয় নেতা-কর্মী দু:সহ সেই স্মৃতি আজও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, এই মামলাটি বর্তমানে রায় দেয়ার পূর্ববর্তী ধাপ অর্থাৎ যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫২ জন আসামীর মধ্যে ১৮ জন আসামীর যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট আসামীদের যুক্তিতর্ক শেষ হলেই এই মামলার রায়ের দিন ধার্য করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার একজন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই মোহাম্মদ তাজউদ্দিন এই মামলার অন্যতম আসামী। গ্রেনেড হামলা চলাকালে টিয়ার সেল ছুঁড়ে হামলাকারীদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয় এবং গ্রেনেড হামলার পর যখন জানতে পারে আমি বেঁচে আছি, তখন সেই রাতেই তাজউদ্দিনসহ আরো কয়েকজনকে দেশ থেকে বিদেশে যাবার সুযোগ করে দেয় হয়। যেখানে গ্রেনেড হামলা হয় সেই স্থানের সকল আলামত পরদিনই সরিয়ে ফেলা হয় ও রাস্তা ধুয়ে ফেলে অন্যান্য আলামতও নষ্ট করা হয়।
গ্রেনেড হামলার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গ্রেনেড হামলা মামলার প্রকৃত আসামীদের আড়াল করা জন্য তথাকথিত জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে চার্জশীট দাখিল করে। পরবর্তীতে জানা যায়, জজ মিয়াকে এই নাটকে অংশ নেয়ার জন্য তাকে বেশ কিছুদিন মাসিক ভাতাও দেয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে যেনতেনভাবে তদন্ত সম্পন্ন করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকল আসামীদের অন্তর্ভূক্ত করে চার্জশীট প্রদান করে এবং ২০১৪ সাল থেকে আরো ১৬৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এভাবে মোট ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চল জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল ধারার সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং এ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশীয় অর্থায়নে ও বৈদেশিক সহায়তায় নেয়া হয় নানা প্রকল্প। যার সফল বাস্তবায়নের সুফল জনগণ পেতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা , উদ্বাস্তুু পুনর্বাসন, বিদ্যুত, যোগাযোগ, অবকাঠামো নির্মাণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশসহ বিভিন্ন প্রকার আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডের উন্নয়নে এ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে, যার অগ্রগতি খুবই আশাব্যঞ্জক।
সংসদ নেতা বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তÍ নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স, খাগড়াছড়ি-এর কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যথাযথ অংশ গ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার করে যাতে কেউ সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ সম্পর্কিত কোন কর্মকান্ড করতে না পারে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার সদা সচেতন। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ, জলবায়ু পরবর্তন ছাড়াও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক যুগান্তকারী ভাষণকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রদর্শন বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণার সুযোগ প্রশস্ত করবে। এ স্বীকৃতি অর্জনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলতর হয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য এ অর্জন এক বিরল সম্মাান।
Be the first to comment on "২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন হামলা : প্রধানমন্ত্রী"