নিউজ ডেস্ক : এক-এগারোর সরকারের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মীর রুহুল আমিন বৃহস্পতিবার তাকে অব্যাহতির এ আদেশ দেন।
এদিন ওই আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি হয়।
মন্ত্রীকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও এ মামলায় প্রয়াত সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের ভাই ফখরুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
দুদকের কৌঁসুলি সানোয়ার আহমেদ লাভলু গনমাধ্যমে বলেন, জমির লিজের শর্ত ভঙ্গের উল্লেখ করে দায়ের করা এ মামলার এজাহারে ১৬১ ধারায় অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ করা হয়েছিল।
পাশাপাশি মন্ত্রীর স্ত্রীর ব্যাংক হিসেবে টাকা লেনদেনের অভিযোগে এজাহারে করা হয়। কিন্তু অভিযোগপত্রে মন্ত্রীর স্ত্রীকে আসামি বা সাক্ষী কোনোটাই করা হয়নি। এই তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রীর পক্ষে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।
সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, মন্ত্রী অব্যাহতি পেলেও এ মামলায় ফখরুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
মন্ত্রীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম।
মন্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল বেলাল বলেন, ১৬১ ধারার অভিযোগে মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হলেও অভিযোগপত্রে উনার বা উনার স্ত্রীর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়নি।
তাই শুনানি শেষে আদালত মামলা থেকে মন্ত্রীকে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন।
সেসময় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় একটি জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ এনে ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানায় মামলাটি করেন দুদকের তখনকার উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এক দশমিক ৪৪ বিঘা আয়তনের জমিটি জনগণের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ছিল।
ওই জমিটি ‘গোল্ডেন ইন’ হোটেলের নামে সাংসদ রফিকুল আনোয়ার ও তার ভাই ফখরুল আনোয়ারকে ইজারা দেওয়ার সুপারিশ করেন মন্ত্রী।
ওই জমির মূল্য ধরা হয়েছিল এক কোটি ৬৯ লাখ ২০৭ টাকা। পরে ‘লিজের শর্ত ভেঙে’ মেসার্স সানমার হোটেল লিমিটেডের নামে ওই জমির ইজারা নিবন্ধন করা হয়।
এক্ষেত্রে দলিলে উল্লেখ করা দরের চেয়ে সানমার হোটেলের কাছ থেকে ২ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৮ টাকা বেশি আদায় করা হয় বলে দুদকের এজাহারে বলা হয়।
মামলায় এজাহারে বলা হয়, এর বিনিময়ে মন্ত্রীর নির্দেশে তার স্ত্রীর একটি ব্যাংক হিসেবে ৫৫ লাখ টাকা জমা করা হয়।
এভাবে একজনের নামে বরাদ্দ জমি অন্যজনের নামে ইজারা নিবন্ধনের মাধ্যমে সরকারের চার কোটি ৬১ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এ মামলায় ২০০৮ সালে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তিন আসামির মধ্যে ফটিকছড়ির সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ার মারা গেছেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে ২০০৮ সালে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে।
ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ মামলাটি বাতিল করে দেয়।
পরে এর বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে দুদক। সেই লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ৮ মে হাই কোর্টের রায় বাতিল করে দেয়।
এরপর গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
Be the first to comment on "দুদকের মামলায় গৃহায়নমন্ত্রীর অব্যাহতি"