নাটকীয়ভাবে রংপুরের জয়

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : শেষ ওভারের তৃতীয় বলটা ফুলটস পেয়েই বাউন্ডারির ওপারে পাঠিয়ে দিলেন কাইরন পোলার্ড, ছক্কা। ৪ বলে যেখানে লাগতো ১০ রান। সেখানে ৩ বলে প্রয়োজন ৪ রান। পরের বলটি করার আগে অনেকক্ষণ সময় নিলেন বোলার থিসারা পেরেরা। অধিনায়ক মাশরাফি এসে বুদ্ধি-পরামর্শ দিলেন। ফিল্ডিং সেট করলেন। এরই ফাঁকে বল পরিবর্তন করা হলো।

ঢাকার ড্রেসিং রুমে তখন পায়চারি করছিলেন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদি অস্থির। কারও যেন আর তর সইছিল না। ডাগ আউটের পাশেই দাঁড়ানো ফ্রাঞ্চাইজি কর্মকর্তারা। রংপুর রাইডার্সের ড্রেসিংরুম এবং ডাগ আউটেও তখন একই অবস্থা। আর গ্যালারি! দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে তখন। কেউ মুনাজাতও তুলে ফেলেছেন, নিজ নিজ দলের জন্য। কেউ চিৎকার করে উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন।

পরের বলটিও ফুলটস দিলেন পেরেরা। নিচু হয়ে এসেছিল বলটি। ইয়র্কার দেয়ার চেষ্টা। বল ব্যাটে আসলো। কিন্তু ছক্কা হলো না। ডিপ মিড উইকেটে বল চলে গেলো। নিশ্চিত সিঙ্গেল নেয়ার মতো। পোলার্ড অপর প্রান্তে থাকা মোহাম্মদ আমিরকে থামতে ইশারা করলেন। রান নিলেন না। তার ইচ্ছা, কোনো একটি বিগ শট খেলে দলকে জিতিয়ে দেবেন।

অপরদিকে পেরেরার ইচ্ছা, একটি পারফেক্ট ইয়র্কার দেয়ার। যাতে পরাস্ত করা যায় দানবীয় ব্যাটসম্যান পোলার্ডকে। পঞ্চম বলটিতে ইচ্ছার সঙ্গে ডেলিভারিটার সমন্বয় ঘটাতে পারলেন। ফুল লেন্থের ইয়র্কার। পোলার্ড তখন বড় শট খেলতে মরিয়া। নিচু হয় আসা বলটি ব্যাট ফাঁকি দিয়ে গিয়ে মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিল। ঢাকা ডায়নামাইটসের জয়ের আশা তখনই শেষ।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসলেন আবু হায়দার রনি। ১ বলে দরকার ৪ রান। কোনোমতে ব্যাটে বল লাগালে হয়তো চার হয়েও যেতে পারে। কিন্তু থিসারা পেরেরা অভিজ্ঞ বোলার। এসব পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হয়, ভালোই জানেন। আরও একটি ইয়র্কার দিলেন তিনি। তাতেই সাঙ্গ হলো রনির উইকেট। ১৪৩ রান তাড়া করতে নেমে ১৩৯ রানেই শেষ ঢাকা। ফলে মাত্র ৩ রানের অসাধারণ এক জয় পেয়ে গেলো রংপুর রাইডার্স। নিশ্চিত হারতে থাকা ম্যাচটিতে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসলো মাশরাফির রংপুর।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ঢাকার প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। উইকেটে তখন বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান কাইরন পোলার্ড। তার আগের ওভারেই মূলত ঢাকার আশা অনেকটা ধোঁয়াশা করে দিলেন লাসিথ মালিঙ্গা। মাত্র তিন রান দিয়েছিলেন তিনি। উইকেট নিয়েছেন একটি। পরের ওভারে কঠিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য অধিনায়ক মাশরাফি আস্থা রাখলেন লঙ্কান আরেক টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট থিসারা পেরেরার হাতে।

পেরারার প্রথম বলটি মিস করেন পোলার্ড। কোনো রান পাননি। পরের বলটি লং অনে ঠেলে দিয়ে রানের সুযোগ পেলেও রান নেননি পোলার্ড। তার চিন্তা মোহাম্মদ আমির এসে যদি আউট হয়ে যান! ইচ্ছে তার, উইকেটে থেকে বাউন্ডারি মারার। তৃতীয় বলেই পেয়ে গেলেন ওভার বাউন্ডারি। সেই ওভার বাউন্ডারিতে যেন জয়ের আনন্দ ঢাকার গ্যালারিতে। রান যে আর মাত্র প্রয়োজন ৪টি। বল হাতে আছে তিনটি। পোলার্ড আরেকটি বাউন্ডারি মারলেই তো শেষ। কিন্তু নিয়তি বুঝি এত সহজ!

ঢাকার আনন্দ ওই পর্যন্তই। পঞ্চম বলে এসে পোলার্ড যখন বোল্ড হয়ে গেলেন, তখন ঢাকার গ্যালারির উত্তাপ একেবারে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেছে যেন। শেষ বলে আবু হায়দার রনি বোল্ড হতেই রংপুরের গ্যালারিতে বাঁধভাঙা উল্লাস। মাশরাফিদের উল্লাস আর উৎসবের মধ্যমনি তখন বোলার থিসারা পেরেরা। দারুণ একটি জয় উপহার দিয়েছেন তিনি রংপুর রাইডার্সকে।

জয়ের জন্য লক্ষ্য মাত্র ১৪৩ রান। এই লক্ষ্য তো ঢাকার ব্যাটসম্যানদের কাছে মামুলি। কিন্তু এই লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে মাত্র দুই রানেই ধাক্কা খেলো ঢাকা ডায়নামাইটস। শূন্য রানেই হারাতে হয় সুনীল নারিনের উইকেট। আগের ম্যাচেই ৪৫ বলে ৭৬ রানের ঝড় উঠিয়েছিলেন নারিন। পরের ম্যাচেই তিনি হতাশ করলেন ঢাকার দর্শকদের। ওয়ান ডাউনে নেমে সাকিব আল হাসানও বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি। বল হাতে ৫ উইকেট পাওয়ার পর সাকিব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ব্যাট হাতে ভালো কিছু করার। কিন্তু সেটা সম্ভব হলো না, সোহাগ গাজীর ঘূর্ণিতে বোকা বনে।

জহুরুল ইসলাম অমি সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন। যার মধ্যে ছিল একটি ছক্কা ও চারটি বাউন্ডারির মার। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসে এভিন লুইসের ব্যাট থেকে। তিন ছক্কায় ২৫ বলে ২৮ রান করেন ঢাকার এই ক্যারিবীয় রিক্রুট। এছাড়া শহিদ আফ্রিদি ২১ ও মেহেদী মারুফ ১৫ রান করেন।

রংপুর রাইডার্সের চার বোলার মাশরাফি, সোহাগ গাজী, থিসারা পেরেরা ও রুবেল হোসেন ২টি করে উইকেট নেন। তবে রংপুরের বোলাররা আজ অতিরিক্ত রান দিয়েছে ১৯টি। যার মধ্যে শুধু ওয়াইড থেকেই আসে ১২ রান। লাসিথ মালিঙ্গা ৪ ওভার বল করে দেন ২০ রান। এর মধ্যে ৬টিই ছিল ওয়াইড।

এর এগে সাকিবের বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ১৪২ রানে অলআউট হয়ে যায় রংপুর রাইডার্স। যার মধ্যে ক্রিস গেইল একাই করেন ৫১ রান। সাকিব আল হাসান একাই ৫টি উইকেট নেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন ক্রিস গেইল।

Be the first to comment on "নাটকীয়ভাবে রংপুরের জয়"

Leave a comment

Your email address will not be published.




20 − thirteen =