নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ব্যাপক নৃশংসতা ও মানবাধিকারের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করলেও বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের একটি প্রতিনিধি দল মনে করে, সেখানে ‘যুদ্ধাপরাধের মতো’ ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রবিবার প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে গিয়ে এমন কথাই বলেছেন। সিনেটর জেফ মার্কলের নেতৃত্বে মর্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে।
প্রতিনিধি দলে সিনেটর রিচার্ড ডার্বিন, কংগ্রেসওম্যান বেটি ম্যাককলাম, জ্যান সাকোস্কি, কংগ্রেসম্যান ডেভিড এন সিসিলিন ছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ডেপুটি চিফ অব মিশন জোয়েল রেইফম্যান, সিনেটর মার্কলের এমএলএ লরা আপডেগ্রোভ, মার্কলের লেজিসলেটিভ ডিরেক্টর জেরিমিয়াহ বাউম্যান এবং সিনেটর ডারবিনের এমএলএ রব লিওনার্ড।
১০ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধি দলটি শুক্রবার রাতে বাংলাদেশে এসে শনিবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে। তারা উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার যাবে। সেখান থেকেও তারা তথ্য সংগ্রহ করবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।
কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বহু বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকার মধ্যে গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে আবার সেনা অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ এবং বাড়ি-ঘর পোড়ানো শুরু হলে বাংলাদেশে পালাতে শুরু করে রোহিঙ্গারা; এরই মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যা-ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে।
ইহসানুল করিম বলেন, “প্রতিনিধি দলের সদস্যরা মনে করেন এটা যুদ্ধপরাধের মতো ঘটনা। তারা এই ধরনের যুদ্ধাপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের মতো ঘটনায় উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন।”
মিয়ানমারের রাখাইনে যা হচ্ছে, তা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লংঘন বলেও মত প্রকাশ করেছে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের দলটি। বাংলাদেশেকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কথাও জানান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন তারা।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শেখ হাসিনাকে জানান যে, তারা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচারের কথা শুনেছেন।
মিয়ানমার এই নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় তারা শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলেও সাক্ষাতকালে উল্লেখ করেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
ইহসানুল করিম বলেন, “প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেছেন, তারা চায় এই শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফেরত যাক।”
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক কারণেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
ইহসানুল করিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানমার আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা চাই তারা তাদের নাগরিকদের ফেরত নিক।” রোহিঙ্গাদের আরকানে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে পূর্ণবাসনের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। পাঁচ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৭ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী এসময় জানান।
কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও এসময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের পর যুক্তরাজ্যের কাউন্টেস অফ ইউসেক্স সোফি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন সোফি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, “মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে আসা বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন কাউন্টেস অফ ইউসেক্স।” বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তার জন্য শেখ হাসিনা ধন্যবাদ জানান। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
Be the first to comment on "রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ‘যুদ্ধাপরাধের মতো’ ঘটনা ঘটেছে"