নিউজ ডেস্ক : সরকার ও বিরোধী দলের মন্ত্রী-এমপিরা ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর (হোল্ডিং) ট্যাক্স কয়েকগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের আগে এভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকার সম্পর্কে ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে তাঁরা সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার রাতে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা। তার অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তোফায়েল আহমেদ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়াও আলোচনার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে এ ব্যাপারে নোটিশ দিয়ে আলোচনার জন্য সংসদ সদস্যদের পরামর্শ দেন।এর আগে চলতি সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদও বিষয়টি উত্থাপন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, হঠাৎ করেই কয়েকগুণ হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক। নিজে টিভিতে দেখেছি বেশ কিছু লোক এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, ট্যাক্স বাড়বে এটা অস্বাভাবিক কিছু না, সব কিছুই দিন দিন বাড়ে। সম্ভবত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর ধরে ট্যাক্স বাড়ান না। কিন্তু সেটা যদি একসঙ্গে বাড়ানো হয় মানুষ তা গ্রহণ করবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি, আমরা জনগণের কথা বলি। জনগণের সুখ-দুঃখের ভাগিদার আমরা। হঠাৎ যার ট্যাক্স ছিল ৮ হাজার টাকা তাকে যদি এখন ৭২ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, তবে অবধারিতভাবেই এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হবেই। তাই আমার মনে হয়, এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।
এ সময় তোফায়েল আহমেদ প্রশ্ন উত্থাপনকারী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্দেশে বলেন, আপনি নোটিশ দিলে তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। আমরা রাজনীতি করি, রাজনীতিতে কতগুলো সময় থাকে। যে জিনিসটি (ট্যাক্স বৃদ্ধি) আপনি ৩-৪ বছর আগে করতে পারতেন, সেই জিনিসটি একটা সরকারের শেষ সময়ে এসে করলে তার একটা প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। এটা নিয়ে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাই এর সুন্দরভাবে নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
বিষয়টির সূত্রপাত করে ঢাকা মহানগর থেকে নির্বাচিত সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা ফ্লোর নিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষ অত্যন্ত অসহায়ের মধ্যে আছে। জলাবদ্ধতার কারণে এমনিতেই আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ দিশেহারা, তার মধ্যে এই হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো যৌক্তিক নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও মেয়ররা হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ান, কিন্তু ভোটারদের কাছে জবাব দিতে হয় এমপি- কাউন্সিলরদের। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র একটি বছর। বাস্তবে আর আছেই ৬-৭ মাস। নির্বাচনের আগে এভাবে ট্যাক্স বাড়ানো হলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
অনতিবিলম্বে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘এটা যদি এক বছর আগে করত, দুই বছর আগে করত তবে সমস্যা ছিল না। এখন তো নির্বাচনের সময় সন্নিকটে। তাই এটা এখন কেন? নির্বাচনের পরে করেন।’
চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেও একইভাবে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান করছি।’
Be the first to comment on "হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সংসদে ক্ষোভ"