নিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, একাত্তরে সময় ৪ বছরের বাচ্চা ছিল আদালতের নির্দেশে তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে, যার ফলে অমুক্তিযোদ্ধারাও তালিকায় ঢুকে পড়েছে। আদালতের নির্দেশের কারণে ৪ বছরের শিশুকেও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা দিতে হচ্ছে। আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এখনো অ-মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রয়েছেন, যারা নিয়মিত ভাতাও পাচ্ছেন।
সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
এটা দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে-কারণে আমরা সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে সমস্যায় পড়েছি। তবে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এ সমস্যাটি আদালত পুনর্বিবেচনা করবেন আদালত।
মোজাম্মেল হক বলেন, আদালত ব্যাখা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার, কিন্তু আমরা বলছি যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কেবল তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহিৃত হবেন।
মন্ত্রী বলেন, অনেক অমুক্তিযোদ্ধা আদালতে মামলা করেছেন। এ বিষয়ে আদালতে ১১৬টি মামলা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশে অমুক্তিযোদ্ধারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছেন। এমনকি এমন অমুক্তিযোদ্ধার নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বিগত ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা এককালীন মিটিয়ে দেবারও নির্দেশনা রয়েছে আদালতের।
তিনি আরও বলেন, আদালতে মামলা থাকার কারণে তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের এখনো বাদ দিতে পারিনি। এখনো অ-মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রয়ে গেছে। জাতির জন্য এটা খুবই লজ্জাজনক এবং বেদনাদায়ক। আদালতের আদেশের কারণেই এটা রয়ে গেছে। তবে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি সংসদের মাধ্যমে আদালতের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন সেই আদেশ পুনর্বিচেনা ও প্রত্যাহার করেন।
তিনদিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েবসাইটে
মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে সরকার কাজ করছে। অধিকাংশ উপজেলার তালিকা হয়েছে। তবে ১২টি উপজেলার তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। তিনদিনের মধ্যে সব উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
আওয়ামী লীগ দলীয় আরেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, খুবই দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক ব্যাপার যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সঠিক তালিকা এখন পর্যন্ত নেই।
মন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা বলতে কী বুঝি তার একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা বলতে যারা ভারতবর্ষে ট্রেনিং নিয়েছেন তাদের একটা তালিকা করি। সেখানে দেখা গেছে, কিছু কিছু সেক্টরের তালিকা তখন সঠিকভাবে সংরক্ষিত ছিল না, বা আমরা বাংলাদেশে আনতে পারিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটি তালিকা করে, যেটা লাল তালিকাভুক্ত বলে পরিচিত। সেখানেও অনেক অভিযোগ আছে।
তিনি বলেন, এরপর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ৩৩ হাজার লোকের একটা তালিকা করে। তারা কোনো প্রকার নীতি-নৈতিকতা ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে প্রায় ৩৩ হাজার লোকের একটা তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দিয়েছিল। যার অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। যেহেতু সেটা সেই আমলে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও বিরোধিতা করেছিল। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। কোনো রকম তথ্য-উপাত্তের ব্যতীরেকেই তারা তালিকা করেছিল। তারা ইচ্ছামতো তালিকা করেছিল। তবে আমরা সঠিক তালিকা করতে চেষ্টা করছি।
Be the first to comment on "‘আদালতের নির্দেশে ৪ বছরের বাচ্চাও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়’"