নিউজ ডেস্ক : মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে হুন্ডি সিন্ডিকেট। বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশ, ইউ ক্যাশসহ অন্যান্য এমএফএস সার্ভিসের এজেন্টদের মাধ্যমে সারাদেশে হুন্ডি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এ মাধ্যমে দ্রুত বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়ে ধস নেমেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত শীর্ষক কর্মশালায় এ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও বাংলাদেশে বেশি কমেছে। কেননা, বিশ্বে আমাদের মার্কেট শেয়ার সবচেয়ে বেশি কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমার কারণ হিসেবে গবেষণায় ব্যাংকের শাখার দূরত্ব, অর্থ পেতে সময়ক্ষেপণ, ব্যাংকারদের ভালো আচরণের অভাব, নানা ধরনের জবাবদিহিতা, বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তা, সাপ্তাহিক ছুটি, অবৈধ অভিবাসী ইত্যাদি বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
এ সময় ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহে শ্লথ প্রবৃদ্ধি। তবে গত মাসে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এটিকে ধরে রাখার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, এটিকে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ অবৈধভাবে দেশে আসছে। হুন্ডি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন উপায়ে এটিকে কমিয়ে আনতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডেপুটি গভর্নর আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা বাস্তবায়নে অবৈধ চ্যানেলে লেনদেন বন্ধ করতে হবে।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার কারণে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেল কাজে লাগাতে হবে। গত ৫ বছর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পরিসর অনেক বেড়েছে।
রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে এটিকে কাজে লাগানো হয়নি। এ কারণে দ্রুত মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে না পারলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে যেসব সুবিধা প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া হয়, সেসব সুবিধা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেয়া উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে খরচ বেশি। এর প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। তাই খরচ কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া ব্যাংকারদেরকে গ্রাহকদের সঙ্গে আরও ভালো আচরণ করতে হবে। কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে।
এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে (এমএফএস) কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে হুন্ডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমএফএসকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তদারকি করতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী। এ সময় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবিবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল।
Be the first to comment on "মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি : বৈধ পথে কমছে রেমিট্যান্স"