গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি : প্রধানমন্ত্রী

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ, বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি।’

রবিবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে, নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের (গণমাধ্যম) অবাধ স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ -এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির উপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করে দেয়া শুধু এ অঞ্চলে নয়, এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। সাম্প্রতিককালে মিয়ানমার সরকারের এই নির্যাতনমূলক আচারণের ফলে সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

তিনি বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাব, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন। মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে এবং বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসনের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবেলার নতুন সংগ্রাম। কিছু মানুষের অপরিণামদর্শী (অবিবেচক) কর্মকাণ্ডের ফলে নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। জঙ্গিবাদ আজ আর কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।

জলবায়ু বিষয়ে তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বছর অতিবৃষ্টিসহ কয়েকবার বন্যায় আমাদের বিশাল জনপদ ভেসে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য যেসব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন করছি। আমাদের চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এসডিজির বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছি। আমাদের প্রত্যাশা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ ও ২০৪১ সালে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রে এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করা এবং এসব রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা তৈরি করা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে সিপিএর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। বিশ্বব্যাপী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যগণের প্রদত্ত এই স্বীকৃতি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের স্বীকৃতির একটি প্রামাণিক দলিল -বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের যে আকাঙ্ক্ষা এ ভূখণ্ডের জনগণ লালন করেছিলেন, ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে তা বাস্তবায়িত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অগ্রভাগে থেকে এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তান শাসনামলের ২৪ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেকটা সময় কারাগারে অন্তরীণ থাকতে হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সামরিক শাসনামলে নিরন্তর সংগ্রামের পর ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন আদায় করে নেন বঙ্গবন্ধু। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি গণতান্ত্রিক পন্হায় ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উল্টো শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস চালায়।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন, ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ৯ মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পৃথিবীকে বিশ্ববাসীর জন্য সুখময়, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাসভূমিতে পরিণত আহ্বান জানিয়ে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে বিদেশি সদস্যদের বাংলাদেশে অবস্থান আনন্দময় এবং এ সম্মেলনের ফলপ্রসূ হোক -এ কামনা করেন।

Be the first to comment on "গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি : প্রধানমন্ত্রী"

Leave a comment

Your email address will not be published.




three × 2 =