সিলেটের রাগীব আলী ছেলেসহ কারামুক্ত

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের ভূমি আত্মসাতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি মামলায় দণ্ডিত সিলেটের আলোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই সিলেট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

রোববার দুপুর ২টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত ২৬ অক্টোবর তাদের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল উচ্চআদালতে খারিজ হওয়ায় তাদের জামিন আদেশ বহাল থাকে।

 

দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার নেতৃত্বাধীন বিচারপতি ইমান আলী, বিচাপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজের আদেশ দেন।

রাগীব আলীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস এমপি, ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান, সাবেক বিচারপতি মনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার ইয়াদাজামান, অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ ও ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল দিলুরুজ্জামান।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার আব্দুল জলিল জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলায় চারটি ধারায় এ দুজনের ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয় আদালত।

এরপর ৬ এপ্রিল প্রতারণা করে তারাপুর চা-বাগানের ভূমি আত্মসাৎ ও জালিয়াতির আরেক মামলায় রাগীব আলীর ১৪ বছর ও ছেলে আবদুল হাইয়ের ১৬ বছর কারাদণ্ড হয়।

জলিল জানান, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তারা। আদালত জামিন মঞ্জুর করলে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল করে।

গত ২৬ অক্টোবর হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করলে তাদের জামিন আদেশ বহাল থাকে। আজ রোববার জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছালে দুপুরে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে তারাপুর চা-বাগানের ৪২২ দশমিক ৯৬ একর দেবোত্তর সম্পত্তি রাগীব আলী দখল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

১৯৯৯ সালের ২৫ অগাস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা বাগান নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। পরে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

উপকমিটি চূড়ান্ত সুপারিশে তারাপুর চা-বাগান অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণামূলকভাবে লিজ হিসেবে দখলে রাখার জন্য রাগীব আলীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয়বিধ মামলা করতে বলে।

প্রতারণার মাধ্যমে এই ভূ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন সিলেট সদরের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম আব্দুল কাদের।

তদন্ত শেষে গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান। ওই বছরের ১২ অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

ওইদিন বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ চলে গিয়েছিলেন ছেলেসহ রাগীব আলী। ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে রাগীব আলী এবং এর আগে ১২ নভেম্বর ভারত থেকে জকিগঞ্জ এসে আবদুল হাই গ্রেফতার হন।

এছাড়া দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে দৈনিক সিলেটের ডাকের সম্পাদক প্রকাশক আবদুল হাই পলাতক অবস্থায় অবৈধভাবে সিলেটের ডাক প্রকাশ করে পাঠকের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অপর এক মামলায় বাবা-ছেলেকে আরও এক বছরের সাজা দেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরু। ওই মামলায়ও তারা মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান তারা।

Be the first to comment on "সিলেটের রাগীব আলী ছেলেসহ কারামুক্ত"

Leave a comment

Your email address will not be published.




three + eleven =