কাতালান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : স্পেন থেকে পুরোপুরি পৃথক হতে গতকাল শুক্রবার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে কাতালোনিয়া। এরপর কাতালোনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন জারি করেছে স্পেন। একই সঙ্গে কাতালান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়। এর মধ্য দিয়ে কাতালোনিয়া সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।

কাতালোনিয়া সংকটে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো। আর এসব প্রতিক্রিয়ায় আভাস মেলে, কাতালোনিয়ার পাশে আসলে কেউ নেই। ক্ষমতাধর দেশগুলো স্পেনের সুরেই সুর মিলিয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে কোন রাষ্ট্র বা সংস্থা কি বলছে:

ইউরোপীয় ইউনিয়ন
কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণায় ইউরোভুক্ত অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্রেক্সিটের (ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া) পর আঞ্চলিক জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) আরেক সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারণ ইইউ চায় না স্পেন থেকে বেরিয়ে স্বাধীন হোক কাতালোনিয়া। তাই স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর এই সংস্থার কি বক্তব্য দেয় – তা জানার আগ্রহ ছিল তুঙ্গে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, কাতালান পার্লামেন্টের ঘোষণায় কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-ক্লদ জাংকার বলেছেন, এই ‘জোটে আরও ভাঙনের কোনো প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাই না আগামীকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯৫টি রাষ্ট্রের জোট হোক।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও তাইয়ানি টুইটে বলেছেন, কাতালোনিয়ায় গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গণভোটকে ‘ইইউ জোটে থাকা কেউই স্বীকৃতি দেবে না।’

জার্মানি
ইউরোপের আর্থিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হলো জার্মানি। দেশটি বলেছে, তারা স্পেনের ঐক্য ধরে রাখতে সমর্থন দিয়ে যাবে এবং কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেবে না। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের মুখপাত্র স্টেফেন জাইবার্ট টুইটারে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীনতার এ ধরনের ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেবে না। স্পেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার বিষয়টি সবসময়ই অলঙ্ঘনীয়। আমরা আশা করি, এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত আছেন তাঁরা আলোচনার মতো সুযোগগুলো ব্যবহার করবেন।’

যুক্তরাষ্ট্র
ওয়াশিংটনও স্পেন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নোরেট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কাতালোনিয়া স্পেনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্র স্পেন সরকারের নেওয়া সাংবিধানিক পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানায়।’

যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্ট স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটিকে ‘স্বীকৃতি’ দেওয়া হবে না। এমনকি ভবিষ্যতেও এ ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। কারণ যে গণভোটের ভিত্তিতে এই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে, সেই গণভোট স্পেনের আদালত ‘অবৈধ’ ঘোষণা করেছে।

তবে স্কটল্যান্ডের সরকার মাদ্রিদের সমালোচনা করেছে। এক বিবৃতিতে নিকোলা স্টার্জনের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি বলেছে, সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা ঠিক হয়নি এবং কাতালোনিয়ায় ‘প্রত্যক্ষ শাসন জারি’ করা কোনো সমাধান হতে পারে না।

স্কটল্যান্ডের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ফিওনা হিসলপ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা কাতালান সরকারের অবস্থা বুঝি এবং তাদের বর্তমান অবস্থানকে সম্মান করি। স্পেনের যেমন স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অধিকার আছে, তেমনি কাতালোনিয়ার মানুষেরও নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার ক্ষমতা থাকা উচিত।’

ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাঁখো স্পেনের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘স্পেনে সংলাপে অংশ নেওয়ার মতো ব্যক্তি একজনই আছেন। তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়। স্পেনে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী আইন চালু আছে। মারিয়ানো রাহয় এসব নিয়ম বহাল রাখতে চান এবং তিনি আমার পূর্ণ সমর্থন পাবেন।’

বেলজিয়াম
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মাইকেল চলতি সংকট নিরসনে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এর একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত। টুইটারে পোস্ট করা বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর দিয়েছেন কাতালান নেতা কার্লোস পুজেমন। তিনি লিখেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রতি তাঁরা সব সময়ই আগ্রহী।

কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তাঁর দেশ ‘অখণ্ড স্পেন’কে স্বীকৃতি দেবে। মন্ট্রিলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সংকট নিরসনে ‘স্পেনের সংবিধান, আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক আইন’ মেনে আলোচনা হতে হবে।

তুরস্ক
তুরস্কের ইইউ বিষয়ক মন্ত্রী ওমর সেলিক বলেছেন, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণাকে বৈধ বলে মনে করেন না তারা। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, স্পেনের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অখণ্ডতা এবং সংবিধানের প্রতি সমর্থন দেওয়া হবে।

সূত্র: আল জাজিরা

Be the first to comment on "কাতালান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী"

Leave a comment

Your email address will not be published.




4 + eleven =