নিউজ ডেস্ক : ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর সব ঘাতক ব্যাধির মধ্যে স্তন ক্যান্সার বেশি মারাত্মক। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে সারাবিশ্বে স্তন ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়, শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার। সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারী পুরুষ মিলিয়ে হিসাব করলেও বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের স্থান শীর্ষে, মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হোন স্তনের ক্যান্সারে। আক্রান্তের হার বছরে প্রতি ১ লাখ মহিলার মধ্যে ৮০ জন। প্রতিবছর পাঁচ লাখের বেশি নারীর অকালমৃত্যু ঘটে এই কারণে। সাধারণত ৪৩ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এতদিন এই ক্যান্সারের ব্যাপারে নারীদের সচেতন করার জোরটা ছিল বেশি, কিন্তু এখন পুরুষদেরও সচেতন করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারণ, পুরুষদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে।
স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তখন স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। পুরুষের থেকে মহিলাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বেশি থাকে। ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার একধরনের ক্যান্সার যা ব্রেস্ট টিস্যু থেকে শুরু হয়। একটি স্তনে ক্যান্সার হলে অপরটিও আক্রান্ত হতে পারে।
স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বা রিস্ক ফ্যাক্টর :
অপরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি :
১. জেন্ডার বা লিঙ্গ: পুরুষেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে, তবে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১০০ গুন বেশি
২. বয়স : বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ে, পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর ঝুঁকি বেশি বাড়ে। তবে অজানা কারণে আমাদের দেশে চল্লিশ এর পরই বেশি দেখা যায়।
৩. জিনগত : বিআরসিএ-১ ও ২ জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশন ৫ থেকে ১০ শতাংশ দায়ী স্তন ক্যান্সার এর জন্য।
৪. বংশগত : কারো পরিবারের কোন নিকটাত্মীয় যেমন মা, খালা, বড় বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয়ে থাকলে তার স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বেশি থাকে।
৫. পিরিয়ড: যেসব নারী ১২ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর পিরিয়ড বন্ধ হয়, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি :
১. সন্তান সংখ্যা : নিঃসন্তান নারীদের স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বেশি থাকে।
২. বেশি বয়সে সন্তান: ৩০ বছর বয়সের পর বিয়ে ও প্রথম সন্তান এর মা হওয়া স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. ব্রেস্টফিডিং না করানো : সন্তান কে বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাস স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ায়
৪. খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি ও ফলমূল কম খেয়ে, চর্বি ও প্রানিজ আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ে।
৫. ওজন : অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক পরিশ্রম এর অনভ্যাস ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, স্তনে সাধারণ কোন চাকা বা পিণ্ড থাকা ইত্যাদি।
স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ:
১. স্তনে চাকা বা পিণ্ড
২. নিপল বা বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া, অসমান বা বাঁকা হয়ে যাওয়া
৩. নিপল দিয়ে অস্বাভাবিক রস বা রক্তক্ষরণ হওয়া
৪. চামড়ার রং বা চেহারার পরিবর্তন
৫. বগলতায় পিণ্ড বা চাকা
উপরোক্ত লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হলে বুঝে নিতে হবে যে আপনার স্তন ক্যান্সার হয়েছে। তারপরও নিশ্চিৎ হতে অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং :
যাদের লক্ষণ দেখা দেয়নি, কিন্তু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, সহজ কোন পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে রোগী খুঁজে বের করার নাম ক্যান্সার স্ক্রিনিং। স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করার প্রধান তিনটি পদ্ধতি:
১. ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স-রে। যার সাহায্যে স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে
২. ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সামিনেশন (CBE) বা চিকিৎসক দিয়ে স্তন পরীক্ষা।
৩. ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন (BSE) বা নিজে নিজের স্তন পরীক্ষা।
প্রাথমিক পর্যায় এ ধরা পরলে স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যেসব মহিলার বয়স ২০ থেকে ৩০ তারা প্রতিমাসে মাসিক শেষ হওয়ার পর নিজেই তার নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন। যাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৯ বছর তারা প্রতি ৩ বছর পরপর চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা করাবেন। ৪০ থেকে বেশি বয়সী মহিলাদের জন্য প্রতি ১ বছর পরপর মেমোগ্রাফি করা উচিত। এছাড়া ৪০ বছরের ঊর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিবছর অন্তত একবার চিকিৎসকের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
অক্টোবর মাস স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস, এই মাসে তাই আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই নারীদেরকে যে, নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের যত্ন নিন। নিজের শরীর নিয়ে ভাবুন। নিজেকে নিয়ে সচেতন হোন। রোগমাত্রই চিকিৎসার দাবি রাখে, নারীর রোগ, গোপন রোগ এসব বলে কিছু নেই। শরীরটা আপনার, এই জীবনও আপনার। তাই নিজের জন্য যেটা সবচেয়ে সম্ভাব্য ভালো, তা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবেন না কখনো।
নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে বেশির ভাগ স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারে। তার জন্য চাই সচেতনতা। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন। নিয়মিত নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করুন। যেকোনো অস্বাভাবিকতায় দ্রুত চিকিৎসা নিন। এখনতো চিকিৎসা নেয়া বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসেই এখন মানুষ ডাক্তারি সেবা পেয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোন এমনকি সাধারন ফিচার ফোন ব্যবহারকারীরাও অনলাইনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারি সেবা পাওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের স্বাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করতে পারছেন। তবে কেনো গোপন রোগের চিকিৎসা করাবেন না? কেনোইবা মরণব্যাধি স্তন ক্যান্সারের মতো রোগটিকে মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত পুষতে হবে? এসবের দিন এখন শেষ। সময় এখন উপযুক্ত সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
Be the first to comment on "স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা জরুরি"