টাইগারদের খারাপ পারফরমেন্স : পেছনে বিপিএলের চিন্তা

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সের গ্রাফ ওঠা নামা করে। সেটা সব দলেরই, সব ক্রিকেটারেরই হয়। কখনো খুব ভাল সময় যায়। আবার খারাপ সময়ও আসে; কিন্তু সেটা সাময়িক ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক; কিন্তু পুরো দল একসাথে খারাপ খেলা এবং সবার পারফরমেন্স একত্রে অনুজ্জ্বল হয়ে পড়া- প্রশ্ন জাগায় বৈকি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টাইগারদের পারফরমেন্স নিয়েও নানা প্রশ্ন। হঠাৎ কি এমন হলো যে, সবাই একযোগে ফ্লপ? ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং ভুলে গেছেন। যে সৌম্য এই কয়েক মাস আগে স্পোর্টিং উইকেটেও রানের নহর বইয়ে দিয়েছেন, এবার তিনি নিষ্প্রভ, ম্লান।

যে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ টিম সাউদি আর ট্রেন্ট বোল্টের ক্ষুরধার বোলিংয়ের বিপক্ষে মাথা উঁচু করে লড়েছিলেন, তারাই এবার অসহায় আত্মসমর্পন করলেন; কিন্তু কেন? অনেক রকম ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ হয়েছে, হচ্ছে, আরও হবে।

একেকজন একেক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ কন্ডিশনকেই খারাপ খেলার জন্য দায়ী করছেন। আবার কারো দাবি, কোচের একার খবরদারি ও কর্তৃত্বই ভরাডুবির অন্যতম কারণ। তার দল গঠনে প্রভাব বিস্তার এবং ক্রিকেটার বাছাই ও মনোনয়নে নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা বুমেরাং হয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক শীর্ষ কর্তারা বলেছেন, ‘কোচের অতিমাত্রায় খবরদারি এবং প্রভাব খাটানোর কারণে চেষ্টা দলের পারফরমেন্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের কথা ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারের ফর্ম ভাল যাচ্ছিল না বেশ কিছু দিন ধরেই। আরও আগেই শাহরিয়ার নাফীস, এনামুল হক বিজয় আর নাঈম ইসলামকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেত; কিন্তু কোচের একগুঁয়েমি আর নির্বাচকদের নীরবতায় তারা সুযোগ পাননি। এখন টপ অর্ডারের দূর্বলতা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। বোঝাই যাচ্ছে আরও আগে টেস্টে শাহরিয়ার নাফীসকে আর এনামুল হক বিজয়কে ওয়ানডেতে নেয়া উচিৎ ছিল। তাহলে শুরুর ওই ভাঙ্গন হয়ত ঠেকানো যেত; কিন্তু কোচ হাথুরুসিংহে নাছোড় বান্দা। তিনি নিজের ইচ্ছে ও অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। নির্বাচকরাও কোচের মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তাতে ক্ষতিই হয়েছে বেশি।’

কারো কারো মত, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও কোচ হাথুরুসিংহেকে একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তার ভুল-ত্রুটি খুঁটিয়ে দেখার বদলে তাকে ছাড় দেয়া হয়েছে। কোচের কাজ-কর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ নেই। তিনি যে কোন সিরিজ বা সফরের পর ক্রিকেটারদের ভুল-ত্রুটি শুধরে দেয়ার কাজ না করে চলে যাচ্ছেন স্বদেশে। আবার আসছেন কোন হোম সিরিজ, আসর বা বিদেশ সফরের ঠিক আগ মুহূর্তে। তখন আর ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ভুল-ত্রুটি শুধরে দেয়ার কাজ করার সময় মেলে না।

তাই তো সৌম্য বারবার অফ স্ট্যাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে ফিরছেন। লিটন দাস বেশি ফাইনারে ফ্লিক করতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন বারবার; কিন্তু তাদেরকে শুধরে দেয়ার কেউ নেই। কি করে থাকবে? কোচতো ত্রুটি-বিচ্যুতি আর দূর্বলতা ও ফাঁক ফোকর শুধরে দেয়ার চেয়ে দল নির্বাচন, পছন্দের ক্রিকেটারকে নেয়ার বিপরীতে অপছন্দের পারফরমারকে বাদ দেয়ার কাজেই বেশি ব্যস্ত। তাই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বারবার। এসব দেখার কেউ নেই।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় টাইগারদের খাপছাড়া পারফরমেন্স এবং ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্পে ঘাটতি দেখে আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে। কারো কারো অভিযোগ, বিপিএল দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই ক্রিকেটারদের সবার মনোযোগ, মনোসংযোগ আর উৎসাহের পুরোটা জুড়েই এখন বিপিএল।

কত তাড়াতাড়ি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেশে ফিরে বিপিএলের অগ্রিম অর্থ হাতে পাবো? অনেক ক্রিকেটার নাকি সারাক্ষণ সে চিন্তায় মশগুল। বলার অপেক্ষা রাখে না, পারিশ্রমিক নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন, দুই বছর ধরে ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধে তৎপর বিসিবি। এখন আর পারিশ্রমিক নিয়ে অত ভোগান্তি নেই। আইকন বা এ প্লাস ক্যাটাগরির সাকিব, তামিম, মুশফিক মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ গড়পড়তা ৭০ লাখ টাকার ওপরে পাবেন। সৌম্য, সাব্বির , ইমরুল, নাসির, মিরাজ, তাসকিনদের ডিমান্ডও বেশ। তারাও গড় পড়তা পঞ্চাশ লাখের মত করে পাবেন। বাকিদের সামনেও লোভনীয় প্রস্তাব।

শুধু অর্থের ছড়াছড়িই নয়। বিপিএল মানেই একটা অন্যরকম উৎসবমুখর পরিবেশ। এক মাস পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা, নামি তারকাদের সাথে হোটেল শেয়ার, একসাথে প্র্যাকটিস করা, ড্রেসিং রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো এবং খেলার অবারিত সুযোগ। পাশাপাশি সাফল্যেও সঙ্গে নানা পার্টি, নামী-দামি রেস্তোঁরায় ডিনার।

সব মিলিয়ে যে কারো জন্যই উপভোগ করার মত আয়োজন হচ্ছে বিপিএল। অথচ ভাল খেলার তাড়া এবং দায় তুলনামুলক কম। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটেও অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ কম নয়; কিন্তু সেখানে ক্লাব কর্তাদের কাছ থেকে ভাল খেলার অত্যধিক চাপও থাকে। সব মিলে বিপিএল খেলতেই মুখিয়ে রয়েছেন ক্রিকেটাররা। সে আসর শুরু হচ্ছে আর কিছু দিন পর। দৃষ্টিটাও সেখানে।

ঢাকার ক্রিকেটের সাথে অনেকদিন জড়িত, এমন বেশ কজনই মনে করেন, ক্রিকেটারদের সবাই প্রায় অবচেতন মনে বিপিএলের কথাই ভেবেছেন বেশি। সে কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভাল খেলার তাগিদ এবং তেড়েফুঁড়ে কিছু করার চেষ্টায় ঘাটতি ছিল। সবার মনে দেশে ফেরার তাড়া।

বিতর্ক পিছু না ছাড়লেও এটা সত্য যে, বিপিএল অবশ্যই দেশের ক্রিকেটারদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে একটা বড় ভূমিকা রাখে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ আসরের প্রতি ক্রিকেটাদের একটা অন্যরকম উৎসাহ এবং আগ্রহ থাকারই কথা। তবে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ বা বিদেশ সফরের আগে বিপিএল থাকলে যে ক্রিকেটারদের মনোযোগ- মনোসংযোগে চিড় ধরাতে পারে- তা আগেভাগেই খেয়াল করা উচিৎ ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকান বোর্ডের সাথে কথা বলে বিপিএলের পর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন করা যেত।

Be the first to comment on "টাইগারদের খারাপ পারফরমেন্স : পেছনে বিপিএলের চিন্তা"

Leave a comment

Your email address will not be published.




4 × two =