প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেপথ্যে ঢাবির কর্মকর্তারা

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটসহ ভর্তি পরীক্ষায় যে কয়েকটি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেগুলোর নেপথ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত বলে ধারণা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের শনাক্তে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও করেছে পুলিশের একটি ইউনিট।

এর আগে শুক্রবার পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সাহায্যের অভিযোগে দুজনকে এবং অসদুপায় অবলম্বনকারী এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শনিবার সিআইডি তাদের চারদিনের রিমান্ডে নেয়।

সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আসামিরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় বিশেষ একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের (মাস্টার কার্ডসদৃশ) মাধ্যমে উত্তর বলে দিত। আন্তর্জাতিক ই-কমার্স ওয়েবসাইট অ্যামাজন ডটকম থেকে তারা ডিভাইসটি সংগ্রহ করে। ভারতেও আট হাজার রুপিতে ডিভাইসটি পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃতরা শুধু শিক্ষার্থীদের ডিভাইস সরবরাহ করে। আরেকটি চক্র ডিভাইসের সাহায্যে পরীক্ষার্থীদের কানেক্ট করে উত্তর বলে দিত।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আসামিরা কতজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জালিয়াতির প্রস্তুতি নিয়েছিল এ সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ অনেকেই ডিভাইস নিয়েও পরে ফেরত দিয়েছে। চক্রটি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের অনেকের নাম ও পরিচয় পেয়েছে সিআইডি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের জড়িতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কীভাবে পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রশ্ন পেত? এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের সদস্যরা মেধাবী ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা দ্রুত চার সেটের প্রশ্ন নিয়ে সলভ (সমাধান) করে দিত। শিক্ষার্থীদের ওই ডিভাইসে কানেক্ট করে ‘১-ক,২-খ’ ক্রম অনুসারে উত্তর বলত। ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নেয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু ঢাবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। আমাদের ধারণা, প্রশ্ন পেয়েই তারা স্মার্ট ফোন দিয়ে চক্রের সদস্যদের প্রশ্নের ছবি তুলে পাঠায়। এর বিপরীতে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার লেনদেন হয়।

এদিকে প্রশ্ন জালিয়াতির ঘটনায় কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাবির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যদি কেউ ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী ব্যাবস্থা নেব।

সিআইডির তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মূলত কয়েকটি উপায়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কাজ করে চক্রটি। চক্রের একটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলো থেকে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে ও তাদের মধ্যে ডিভাইসগুলো পৌঁছে দেয়। আরেকটি গ্রুপ পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নের ছবি তুলে বাইরে পাঠায়, অন্য গ্রুপ প্রশ্নের সমাধান করে।

সিআইডি জানায়, চক্রটি গত তিন বছর ধরে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরীক্ষার্থীদের জালিয়াতিতে সহায়তা করছে। এর বিপরীতে তারা দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেয়। চক্রটি শিক্ষার্থীদের আসল সার্টিফিকেটের কপি জামানত হিসেবে জমা রেখে ডিভাইজগুলো সরবরাহ করে। পরীক্ষা শেষে ডিভাইস ফেরত দিয়ে সার্টিফিকেট ফেরত নেয় শিক্ষার্থীরা।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডি জানতে পারে, ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী এ ডিভাইস নিয়েছিল। অনেকেই আগের দিন ভয়ে এটি ফেরত দিয়েছে।

সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, জালিয়াতির মূল স্পট ফার্মগেট। এখানকার কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষার্থীদের সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ ডিভাইসটিও সরবরাহ করা হয় ফার্মগেট থেকে। এমনকি প্রশ্ন সলভ (সমাধান) করা হয় ফার্মগেট এলাকায় বসে।

এদিকে মামলার কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিবুর রহমান বলেন, রিমান্ডে চক্রটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। প্রয়োজনে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ১২ জনের যে কাউকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

শুক্রবার ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার দিন একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুন এবং শহিদুল্লাহ হল থেকে মহিউদ্দিন রানাকে গ্রেফতার করা হয়। মামুন ঢাবির অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আর রানা ঢাবিতে ফিজিক্সে মাস্টার্স করছেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাকেন্দ্র ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে অসদুপায় অবলম্বনকারী ইশরাক আহমেদ রাফীকে গ্রেফতার করা হয়।

Be the first to comment on "প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেপথ্যে ঢাবির কর্মকর্তারা"

Leave a comment

Your email address will not be published.




5 + 14 =