ইভিএম মেশিন ধ্বংস করার চিন্তাভাবনা করছে ইসি

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : প্রায় ১০ বছর আগে কেনা হাজার কোটি টাকার ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ধ্বংস করার চিন্তাভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেনার পর দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এসব ইভিএম নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এসব প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সংশ্লিষ্টরা বলছেন উল্টো কথা। তাদের দাবি, কোনো ইভিএমে ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে সব ধ্বংস করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

সূত্র জানায়, বিগত সেনাশাসন আমলে সিইসি ড. শামসুল হুদা কমিশনের কেনা এসব ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে মাত্র কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদে ব্যবহারের জন্য ইভিএম কেনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এখন এগুলো অকেজো। এজন্য ধ্বংস করতে ৮ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইভিএম অকেজো করা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ওইসব ইভিএম পরীক্ষা করে সবগুলো প্রায় অকেজো অবস্থায় পাওয়া গেছে। এগুলো দরপত্রের মাধ্যমে বেচলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই আমরা ধ্বংস করার সুপারিশ করব।

এ বিষয়ে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও ইভিএমের উদ্ভাবক লুৎফুল কবির বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে কেন ইসি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ ইসি বারবার করে আসছে। কিন্তু এ অভিযোগ সঠিক নয়। তবে নতুন ইভিএম উদ্ভাবনের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের কিছু করার নেই।

জানা যায়, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে কয়েকটি ওয়ার্ডে এ প্রযুক্তির ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে যতগুলো নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, সবকটিতে ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপরও রকিবউদ্দীন কমিশন খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। অন্য নির্বাচনের ত্রুটি বড় আকার না হলেও রাসিকে ইভিএমের যান্ত্রিক ত্রুটি রকিব কমিশনকে সংকটে ফেলে। তখন থেকে বুয়েটের উদ্ভাবনকারীদের সঙ্গে গত কমিশনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বার বার ইভিএম সারিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও তাতে অস্বীকৃতি জানায় বুয়েটের ওই শিক্ষক। ফলে নির্বাচনে তারা এই প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।

ইভিএম সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালে ব্যবহৃত ইভিএম ছিল নির্দিষ্ট প্রার্থীর প্রতীক-সংবলিত ইভিএম। ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে এটিকে সচল রাখা হতো। এই প্রযুক্তির ইভিএমের প্রত্যেকটির জন্য ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ১০ হাজার টাকা। পরে এই প্রযুক্তিতে সংস্কারের কারণে ব্যয় বাড়ে কয়েকগুণ। এনালগ সিস্টেমে একটি ইভিএমে প্রথমে সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রত্যেকটির জন্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। কেনা হয় প্রায় এক হাজার ৮০ ইভিএম।

এত টাকা খরচের পরও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক), নরসিংদী পৌরসভা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) ও এলেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যবহার হওয়া ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেয়। কিন্তু ভোটের ব্যবধান কম থাকায় খবরটি জানা জানি হয়নি।

এসব ত্রুটি সমাধানে সাবেক শামসুল হুদা কমিশন বুয়েটের ভিসি ও রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে। তাদের বিদায়ের আগে একটি সুপারিশও রেখে যায় কমিশন। কিন্তু পরবর্তী কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন বিষয়টি আমলে না নিয়ে খুলনা, বরিশাল, সিলেট এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। তবে, বুয়েটের ব্যবহার হওয়া চায়না ব্যাটারির মূল্য অনেক বেশি এ অজুহাতে বিদায়ী কমিশন ওই সিটি নির্বাচনের ইভিএমে দেশীয় চান্দা ব্যাটারি ব্যবহার করে। পরে রাসিক সিটির একটি ওয়ার্ডে ইভিএম হ্যাক করলে তুলকালাম শুরু হয়। এমনকি বুয়েটকে ত্রুটি সংশোধনের অনুরোধ জানালেও তারা আগ্রহী হয়নি। বুয়েট যুক্তি দাঁড় করিয়ে বিদায়ী কমিশনকে জানিয়েছিল, তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির ইভিএমের সঙ্গে লোকাল ব্যাটারি সাপোর্টযোগ্য নয়।

এ নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে। পরবর্তীতে বুয়েটের ইভিএমকে বিদায় জানিয়ে এনআইডির সাবেক ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নতুন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে নতুন উদ্ভাবিত ইভিএম ব্যবহারের আগে পুরোনো ইভিএমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত বুধবার জারি করা আট সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমানকে। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এবং ইসির সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশের আলোকে ধ্বংস করা হবে পুরানো ইভিএম।

Be the first to comment on "ইভিএম মেশিন ধ্বংস করার চিন্তাভাবনা করছে ইসি"

Leave a comment

Your email address will not be published.




14 − nine =