নিউজ ডেস্ক : ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ৩৯ দিনের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ার পথে রওনা হয়েছেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নিজের আশঙ্কার কথা জানিয়ে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিচারপতি সিনহা ছুটিতে গেছেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে বিদেশে যাওয়ার সময় তা নাকচ করে তিনি বলেছেন, অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় তিনি ‘বিব্রত’।
“আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস।”
চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর যে অভিযোগ বিএনপি করছিল, তাও নাকচ করেছেন বিচারপতি সিনহা। বলেছেন, বিচার বিভাগ যাতে ‘কলুষিত না হয়’, সেজন্য তিনি নিজেই ‘সাময়িকভাবে’ যাচ্ছেন।
সাড়ে তিন মাস চাকরির মেয়াদ থাকা প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপের আশঙ্কার কথাও বলেছেন। রাষ্ট্রের জন্য তা ‘কল্যাণ বয়ে আনবে না’ বলে তিনি সরকারকে সতর্ক করেছেন।
সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ফ্লাইট এসকিউ ৪৪৭ এ শুক্রবার রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। সেখানে তিনি তার মেয়ে সূচনা সিনহার বাসায় উঠবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শোনা যাচ্ছিল, স্ত্রী সুষমা সিনহাও যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে; হেয়ার রোডের বাসা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় স্বামীর সঙ্গে গাড়িতেও ছিলেন তিনি।
তবে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা একাই উড়োজাহাজে ওঠেন। মিসেস সিনহা তাকে তুলে দিতে এসেছিলেন বলে হাই কোর্টের প্রটোকল কর্মকর্তা আবদুল ওয়ারেস জানান।
সিঙ্গাপুর এয়ালাইন্সের ডিউটি ম্যানেজার মো. জুনায়েদ হোসেন বলেন, ফ্লাইট সময়মতই ছেড়ে গেছে। প্রধান বিচারপতি একাই ছিলেন, স্ত্রী সঙ্গে যাননি। সিঙ্গাপুর হয়ে শনিবার অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছাবে ওই ফ্লাইট।
দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনা হয়নি। আর কোনো প্রধান বিচারপতির বিদেশযাত্রা সংবাদমাধ্যমের এতটা মনোযোগও আকর্ষণ করেনি।
বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করে বিচারপতি সিনহার দেওয়া চিঠির বরাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধান বিচারপতি চারটি দেশে যেতে চান।
“অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা এবং ইউনাইটেড কিংডম- এই চারটি দেশে যেতে চান। আগামীকাল ১৩ অক্টোবর দেশ ত্যাগ করতে চান এবং ১০ নভেম্বর দেশে ফিরে আসবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।”
প্রথমে প্রধান বিচারপতির জন্য ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বিচারপতি সিনহা যেহেতু আরও বেশি দিন বিদেশে থাকবেন, সেহেতু রাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার নতুন আদেশ দেন।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি ‘দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত’ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।
Be the first to comment on "একাই রাজধানী ছাড়লেন প্রধান বিচারপতি"