স্পোর্টস রিপোর্টার : ভক্তের ফোন ভাঙার সেই ঘটনা থেকে এখনো রেহাই মেলেনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাঁকে অভিযুক্ত করেছে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ভক্তের ফোন চাপড় মেরে ফেলে দেন রোনালদো।
ঘটনাটা গত এপ্রিলের। গুডিসন পার্কে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এভারটনের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। হারের পর ইউনাইটেড তারকা রোনালদো ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে এক এভারটনভক্ত মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টা করে।
রোনালদো বিরক্ত হয়ে সেই ভক্তের হাতে চাপড় মারেন। তাতে ভক্তটির হাত থেকে মুঠোফোন পড়ে যায়। ঘটনার ভিডিওটি সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। পরদিন রোনালদো নিজে ইনস্টাগ্রামে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের উচিত নিজের আবেগ সংযত রেখে তরুণদের সামনে উদাহরণ তৈরি করা। আমি আমার প্রতিক্রিয়ার জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
তাতেও ঝামেলা শেষ হয়নি। গত আগস্টে মার্সেসাইড পুলিশ রোনালদোকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেয়। পর্তুগিজ তারকাকে বলা হয়, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আবার ঘটলে রোনালদোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে এভারটনের সেই ভক্তকে ইউনাইটেডের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচ দেখার জন্য আমন্ত্রণও জানান রোনালদো।
জেক হার্ডিং নামের অপ্রাপ্তবয়স্ক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সেই ভক্ত এপ্রিলের সেই দিনে মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো গিয়েছিল নিজের প্রিয় দল এভারটনের খেলা দেখতে। প্রথম দিনেই রোনালদোর কাছে একটা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অপ্রাপ্তবয়স্ক ভক্ত এমন আচরণের শিকার হওয়ায় কেউ-ই বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। পরে এফএ জানায়, এই ঘটনার তদন্ত করা হবে।
ভিডিও ফুটেজ দেখে কাল এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এফএ। রোনালদোকে ‘অশোভন এবং সহিংস আচরণ’–এর দায়ে অভিযুক্ত করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ৯ এপ্রিল শনিবার প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচ শেষে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে এফএর ই৩৩ বিধি ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শেষ বাঁশি বাজার পর এই ফরোয়ার্ডের আচরণ অশোভন এবং সহিংস ছিল।’
এফএ এই বিবৃতি দেওয়ার পর রোনালদোর ক্লাব ইউনাইটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে এফএর বিবৃতিটা আমরা দেখেছি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তার উত্তরে সমর্থন জানাব আমরা।’
বিবিসির প্রতিবেদক সাইমন স্টোন জানিয়েছেন, রোনালদোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সচরাচর দেখা যায় না। পর্তুগিজ তারকা অপরাধ স্বীকার করেছেন কি না, তা নিয়ে শুনানি হবে। মৌখিক সতর্কবার্তা, জরিমানা কিংবা নিষেধাজ্ঞা—এর মধ্যে যেকোনো শাস্তি হতে পারে রোনালদোর। টটেনহাম ডিফেন্ডার এরিক দিয়ের দুই বছর আগে গ্যালারিতে গিয়ে এক দর্শকের সঙ্গে বচসা বাধিয়েছিলেন। সে জন্য চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন দিয়ের।
হার্ডিংয়ের মা সারা কেলি তখন বলেছিলেন, রোনালদোর এমন আচরণের তিনি কোনো কারণ খুঁজে পাননি। সারার ভাষায়, ‘আমিও কাঁদছিলাম। ছেলেও মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। বাসায় আসার আগপর্যন্ত ঘটনাটা হজম করতে তার কষ্ট হয়েছে। এতটাই মন খারাপ যে আবারও ফুটবল ম্যাচ দেখতে যাওয়ার ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। এটা ছিল তার প্রথম ফুটবল ম্যাচ দেখার দিন, আর সেদিনই এমন কিছু ঘটল। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটা ছেলে একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের লাঞ্ছনার শিকার—আমি বিষয়টিকে এভাবে দেখি।’