আমরা অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন: ইসি

Print Friendly, PDF & Email

স্টাফ রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সময় নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ইসি অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন; আস্থাশীলতার ঘাটতিতে রয়েছে। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিজেদের কাজের মাধ্যমে কিছুটা হলেও আস্থা অর্জনে এগিয়েছে কমিশন।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে এক অনুষ্ঠানে এটি প্রকাশ করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, আগামী বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে ইসিকে।

অসুস্থ থাকায় উপস্থিত ছিলেন না প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাই জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান রোডম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্য একটাই—অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের জবাবদিহি ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন এ নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনের পথে ১৪টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কর্মপরিকল্পনার সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, ভোটের মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সব দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, জাল ভোট ঠেকানো, প্রার্থী এজেন্ট ও ভোটারদের আসা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে নির্বাচন কশিমনার মো. আলমগীর বলেন, ‘এ কর্মপরিকল্পনায় সবার মতামত রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। যেসব বিষয় আমাদের আওতায় রয়েছে, তা রাখা হয়েছে। তবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশগুলো রাখা হয়নি।’

মো. আলমগীর আরো বলেন, রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জগুলো ধরে মোকাবিলা করে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ভোটের এখনো এক বছর চার মাস বাকি। অনেকে ইসি নিয়ে আস্থাহীনতায় থাকলেও আগামীতে কর্মকাণ্ড দেখে আস্থাশীল হবে।

অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘পরিকল্পনা ধরেই এগিয়ে যাব আমরা। সবার সহযোগিতা পেলে অংশগ্রহণমূলক ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব।’

নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, অংশীজন সবার সহযোগিতা দরকার। বাস্তব ও সময়ভিত্তিক এ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোনো যাবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড় শ আসনের ইভিএমের ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধু মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোয় ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে।

ইসি

রোডম্যাপে ১৪টি চ্যালেঞ্জ ও ১৯টি উত্তরণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ইসির রোডম্যাপের সারসংক্ষেপ হলো—

*আইন সংস্কার: ২০২২ আগস্ট থেকে ২০২৩ ফেব্রুয়ারি

*সংলাপ: ২০২২ মার্চ থেকে ২০২২ ডিসেম্বর

*সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস: ২০২৩ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ জুন

*আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার: আগস্ট ২০২২ থেকে ২০২৩ আগস্ট

*নতুন দল নিবন্ধন: ২০২২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ জুন

*ভোটার তালিকা: ২০২২ হালনাগাদ শুরু মে, ২০২৩ মার্চে চূড়ান্ত প্রকাশ; তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সংসদীয় আসন অনুযায়ী ৩০০ এলাকার তালিকা প্রস্তুত।

*ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ: ২০২৩ জুন থেকে আগস্ট ২০২৩; তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ।

*প্রশিক্ষণ: ২০২৩ জানুয়ারি থেকে তফসিল ঘোষণার পরেও চলবে

*পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন: জানুয়ারি ২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৩

*সংবিধান অনুযায়ী, আগামী বছরের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি; নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন; ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; সব রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ/ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/ সমর্থক/ পুলিশ/ প্রশাসন কর্তৃক কোনো রকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া; জাল ভোট/ ভোটকেন্দ্র দখল/ ব্যালট ছিনতাই রোধ; পৃথিবী/ এজেন্ট/ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন; ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি; নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা/ কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান; পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিতকরণ; পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী/ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ; নিরপেক্ষ দেশি/ বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।

উত্তরণের উপায়
বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে সুপারিশগুলো অধিকাংশজনই করেছেন, তা বাস্তবায়ন; সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনী প্রচারকার্য নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা; সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক ও তাঁদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা। এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ; নির্বাচনের পূর্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া; মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের সঙ্গে সভা করে তাদের অধীন কর্মকর্তা, যাঁরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁরা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, সে বিষয়ে অধীনস্থ ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া; প্রতি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন; ভোটকেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন; ইভিএমের ব্যবহার সবোর্চ্চ ১৫০ আসনে সীমাবদ্ধ রাখা।

শুধু মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোয় ব্যবহার করা; নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ; নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ, ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক সঙ্গে সঙ্গে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ; আরপিও ও নির্বাচনী আচরণবিধিতে কতিপয় প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, যত দূর সম্ভব নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের একটি তালিকা তৈরি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পূর্বেই শুরু করা, যাতে যথাযথভাবে তাঁদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব হয়; যেসব প্রিসাইডিং/ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের বিষয়ে প্রার্থীর যুক্তিসংগত আপত্তি থাকবে তাঁদের নিয়োগ না দেওয়া; দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং করা; গণমাধ্যম কর্মী নিয়োগ ও তাঁদের জন্যও ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থা করা; নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা; প্রার্থীদের জনসভা করার জন্য স্থান, তারিখ, সময় শিডিউল করে দেওয়া।