পিঠার সমাহার, লোকসংগীতে শুরু প্রাণ চিনিগুড়া নবান্ন উৎসব

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : চলছে অগ্রহায়ণ। কৃষকের ঘরে ঘরে আসছে নতুন ধান। এ ধান আগমনকে কেন্দ্র করে রয়েছে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, রয়েছে নবান্ন উৎসব। গ্রামেগঞ্জে নতুন ধানের চালের তৈরি নানাজাতের পিঠা, তাতে প্রাণ পায় এই নবান্ন।

রাজধানীতে নতুন ধান, কৃষক না থাকলেও নবান্ন উৎসবের আমেজ ঠিকই মিলছে। ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘প্রাণ চিনিগুড়া নবান্ন উৎসব ১৪২৬’। চিতই, পুলি, পাটিসাপটা, ভাপা, তেলপোয়াসহ আরও নানাজাতের পিঠার সমাহার এই মেলায়।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৯টায় এ উৎসব শুরু হয়েছে। বাংলার সংস্কৃতিকে ধারণ করে তিন দিনব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলবে এ উৎসব।

নবান্ন উৎসব ঘুরে দেখা গেছে, বাংলার নানা জাতের পিঠা নিয়ে স্টল বসেছে। সেখানে তৈরি করা হচ্ছে পিঠা। অনেকে সকালের নাস্তা সেরে নিচ্ছেন পিঠা দিয়ে। এ ছাড়া শিশুদের জন্য চরকিরও আয়োজন রয়েছে সেখানে।

মেলায় রয়েছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আয়োজনও।

আয়োজকরা জানান, তিন দিনের এ মেলার প্রতিদিনই সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে। যে সংস্কৃতি বাংলা ধারণ করেছে দীর্ঘদিন, তেমন আয়োজনই থাকছে।

আজ প্রথম দিন সকালের আয়োজনের শুরু হয় একক লোকসংগীত দিয়ে। লোকসংগীত গাইছেন কানন বালা সরকার, সরদার রহমত উল্লাহ, শান্তা সরকার ও মীরা মণ্ডল। এরপর দলীয় সংগীত গাইবে সমস্বর এবং পথনাটক করবে চন্দ্রকলা থিয়েটার।

দুপুর সাড়ে ৩টায় একক আবৃত্তি করবেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও তামান্না তিথী (গল্প বলা)। আবৃত্তি শেষে একক সংগীতে অংশ নেবেন লোক সংগীতশিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী শ্যামল পাল ও চ্যানেল-আইয়ের সেরা কণ্ঠ খায়রুল ওয়াসি। এরপর দলীয় সংগীত করবে সুর বিহার। দলীয় নৃত্য করবে গারো কালচারাল একাডেমি। বিশেষ পরিবেনায় থাকবে মহুয়ার পালা (মানিকগঞ্জ)।

আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। এর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট গনমাধ্যমে বলেন, ‘নবান্ন পৃথিবী তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে আদিমতম একটি উৎসব। ফসল বা অন্নের সঙ্গে মানুষের বাঁচা-মরার সম্পর্ক, এটা প্রকৃতিনির্ভর। প্রকৃতিকে তুষ্ট করতে পারলেই আগে ফসল হত। এ জন্য নানাভাবে এটার আয়োজন চলত। যখন প্রথম ধানটা কারও বাড়িতে আসত, কেউ ভগবানকে, কেউ সৃষ্টিকর্তাকে, কেউ আল্লাহকে, কেউ পীর-ফকিরকে তুষ্ট করত। কিছু গ্রাম্য নীতি ছিল যে, গ্রামে খেজুরের রস দিয়ে প্রথম চালটি রান্না করা হতো। সিন্নি দিয়ে কলা পাতায় করে সেটা সবাইকে দেয়া হত। এটা আমাদের পরম্পরা, ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য থেকে দীর্ঘকাল গ্রামে-গঞ্জে নানাভাবে পালিত হয়ে আসছে।’

“আর অগ্রহায়ণ মাসেই সাধারণত বাঙালির সমৃদ্ধি হয়, ধান-চাল আসে কৃষকের ঘরে। জাতীয় সংগীতেও বলা হয় ‘অগ্রহায়ণের ভরা খেতে কী দেখেছি মা,’ সেখানে ফসলই দেখেছি”, – যোগ করেন তিনি।

সুইট আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম পিঠাগুলো চেনে না। তারা হটডগ, পিজা – এসবে অভ্যস্ত। তারা পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু আমার যে মা-বোন, আমার খালা-দাদিরা কত সুন্দর করে নানারকম পিঠা বানান, সেগুলো এখানে রয়েছে। সেই পিঠা, নকশি, এতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।’

‘এটা আমাদের অনন্য উৎসব, হাজার বছরের উৎসব। এ উৎসব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে পালন করা যায়। এখানে সবাইকে নিয়ে আয়োজন করা যায়,’- বলেন এই আয়োজক।