এমপি বুবলীকে বিএ পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী তামান্না নুসরাত বুবলী। তার বিএ পরীক্ষার পরপর ৮টি বিষয়ে প্রক্সি দিয়েছেন অন্য শিক্ষার্থী। গতকাল শুক্রবার শেষ পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীকে বিএ পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমপি ববুলীর এই জালিয়াতির খবরে এলাকায় নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী ও গাজীপুর আসনের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। তিনি নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী। তার দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৩ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) প্রোগ্রামে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- ১৩টি পরীক্ষার একটিতেও স্ব-শরীরে তিনি অংশ নেননি। তার পক্ষে একেক সময় একেক জন অংশ নিয়েছে। আর এমপির প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে সুবিধা দিতে পরীক্ষার কেন্দ্রসহ হল পাহারায় থাকতেন এমপির লোকজন। তাই ভয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেউই মুখ খুলতে পারেননি।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার পরীক্ষা দিতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক পরীক্ষার্থী।

প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। তবে তার ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেননি। এমপি বুবলীর পরীক্ষা কীভাবে দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে তার কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি এশা।

প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন পরীক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার বিধান থাকলেও এর কিছুই করেননি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। অনেকটা বীর দর্পেই হল থেকে বেরিয়ে যান ওই পরীক্ষার্থী।

নরসিংদী সরকারি কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর শফিকুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীর ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র ছিল না। প্রবেশপত্র নাকি হারিয়ে গেছে। তাবে থানায় জিডির কপি নিয়ে পরীক্ষার হলে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসছেন। তাই আমরা চিনতে পারিনি। বিষয়টি জানার পর প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশাকে আটক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দায়িত্বে ছিলেন একজন পুলিশ সদস্য। তাই কথা বলার ফাঁকে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তবে পরে অনেক পুলিশ সদস্যই কলেজে এসেছেন।

এদিকে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর সকল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। তাকে পরীক্ষা থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।