ফতুল্লায় জঙ্গি আস্তানা : দুই ভাইসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোখলেসুর রহমান বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।

মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদিনের ছেলে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক ফরিদ উদ্দিন রুমি (২৭), নারায়ণগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র মিশুক খান মিজান (১৯) ও পলাতক ফরিদ উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন রফিক, অজ্ঞাত পরিচয়ের তামিম, আজমীর, আনোয়ারসহ নামীয় ছয়জন ও অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজমের ইউনিটের দায়ের করা ওই মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় গ্রেফতার ফরিদ উদ্দিন রুমি ও মিশুক খান মিজানকে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকায় পাঁচটি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল নব্য জেএমবির পাঁচজন সদস্য। এদের মধ্যে দু’জন নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার রুমি ও মিজান। হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলো তারাই তৈরি করেছে। এরাই নারায়ণগঞ্জের আস্তানায় বোমাগুলো তৈরি করে। এক্ষেত্রে নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান ও অনলাইন বোমা বানানোর ভিডিও দেখে দক্ষতা অর্জন করে তারা। এই ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মিশুক খান মিজানকে গ্রেফতারের পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তক্কার মাঠ সংলগ্ন এক তলা একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। সোমবার দুপুর পর্যন্ত সেখানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ফরিদ উদ্দিন রুমিকে।

অভিযান শেষে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ওই বাড়িতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে পুলিশের ওপর সাম্প্রতিক বোমা হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় অভিযান শুরু হলে বোম্ব ডিসপোজাল টিম টিনশেড বাড়ির ছয়টি কক্ষে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে বিস্ফোরকদ্রব্যগুলো ধ্বংস করতে শুরু করেন তারা। দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিট, ১টা ১০ মিনিট, ১টা ২৭ ও ২টা ৯ মিনিটে চার দফায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। শেষ বিস্ফোরণের পর সেখানে আগুন ধরে গেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা নিভিয়ে ফেলেন।

মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বোম্ব ডিসপোজাল টিম ভেতরে প্রচুর বিস্ফোরক পেয়েছিল। এটা মূলত ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে সক্রিয় ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ও আইডি জাতীয় বিস্ফোরক ছিল। কিছু কিছু সেনসেটিভ কেমিক্যাল ছিল। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় এমন কিছু বিস্ফোরক ছিল। সেটা একটি রেফ্রিজারেটরে মজুত ছিল। সেটা ধ্বংস করা হয়েছে। সুইসাইডাল ভেস্ট চেম্বার যুক্ত কিছু ডিভাইস ছিল। সেখানে ক্যান ঢুকানো ছিল। এটা কোনো শ্যুটিং কাজে ব্যবহৃত। ধারণা করা হচ্ছে হয়তো এটা তৈরির জন্য সেখানে রাখা হয়েছিল। একটি কক্ষ থেকে ২টা খেলনা বন্দুক পাওয়া গেছে। আইএসের ভিডিওর টয়গানের সঙ্গে উদ্ধারকৃত টয়গানের অনেকটা মিল রয়েছে। এগুলো মূলত শ্যুটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পাওয়া গেছে চাপাতি ও বোমা তৈরির উপকরণ।