ফারমার্স ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে রাজনৈতিকভাবে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম শামীমকে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানির আইনের ৪৬ ধারায় আইন লঙ্ঘন ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে অপসারণ করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা।

এ দিকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও একই সঙ্গে পরিচালক পদ ছেড়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। তাদের পদত্যাগের আগের দিন ২৬ নভেম্বর এ কে এম শামীমকে এমডির পদ থেকে কেন অপসারণ করা হবে না- জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩১ ডিসেম্বর তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটি ব্যাংকটির বিভিন্ন অনিয়ম ও তারল্য সঙ্কট বিষয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে এমডি এ কে এম শামীমকে। এসময় চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদকে দায়ী করে এমডি বলেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি। ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতো পরিচালনা পর্ষদ। এ কারণেই ব্যাংকটিতে বড় বড় অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।

অপসারিত এমডি এ কে এম শামীম বাংলাদেশ ব্যাংকের স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছিলেন, ফারমার্স ব্যাংক কার্যক্রম শুরুর আগে থেকে নানা অনিয়মে জড়িয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের আগে থেকে অফিস ভাড়া দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়া হয়। তখন অবশ্য তিনি এমডি ছিলেন না। এভাবে পর্ষদ শুরু থেকে নানা অনিয়মের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ব্যবহার করেছে। যেখানে এমডিসহ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম কাজের স্বাধীনতা পায়নি। ফলে চাইলেও অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংকটির এমডি বলেছেন, পরিচালকদের অনেকেই নিয়মিত অফিসে আসতেন। পর্ষদের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর সবকিছু করতেন। তিনি শাখা পর্যায়েও যোগাযোগ করতেন। শাখা ব্যবস্থাপকদের দিকনির্দেশনা দিতেন। ফলে তারা অনেক সময় আমার নির্দেশনাও মানতে চাইতেন না।

এ কে এম শামীম জানান, শাখা ব্যবস্থাপকরা অনেকেই মনে করতেন, চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ। তাই ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি অনেক সময়। এমনকি ঋণ অনুমোদন ও ছাড় করে তা পরে অনুমোদনের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতেন তারা। এটি ছিল ব্যাংকটির সুশাসন ও ব্যর্থতার বড় কারণ। এভাবে ঋণ বিতরণে অনিয়ম হলেও এমডি হিসেবে কিছু করার ছিল না। অনেক শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এমডি হিসেবে যোগাযোগ করলে তারা পর্ষদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতেন।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শামীম বলেন, এর আগে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পেরে ব্যাংকটির একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকরি ছেড়ে অন্য ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন। তিনিও পর্ষদের কাছে জিম্মি ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

তারল্য সঙ্কটের দায় প্রধান নির্বাহী এড়াতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারমার্স ব্যাংকের এমডি বলেন, এখানেও তার নিজের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ছিল না। তিনি সবকিছু পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যানের নির্দেশে করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নতুন ঋণ বিতরণের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে একপর্যায়ে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভয় থেকে তা করতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনকারী দলকে তিনিই এ তথ্য দিয়েছেন।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ প্রজন্মের এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৩৮ কোটি টাকা। শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই ব্যাংকটির পাওনা ১৩৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকটির আসল খেয়ে এখন ৭৫ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এদিকে ব্যাংকটির ওপরে সাধারণ আমানতকারীদের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও আস্থা হারিয়েছে। ফলে গত ১২ ডিসেম্বর ব্যাংকটি তারল্য সঙ্কট কাটাতে বাজারে বন্ড ছেড়েও ক্রেতা পাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামলাতে বন্ডের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করে ফারমার্স ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক।

Be the first to comment on "ফারমার্স ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ"

Leave a comment

Your email address will not be published.




16 − 12 =