ভুয়া ডাক্তার রাজনকে থানায় সোপর্দ করার নির্দেশ হাইকোর্টের

Print Friendly, PDF & Email

নিউজ ডেস্ক : সন্তান প্রসবের সময় প্রসূতির পেটে গজ রেখে অস্ত্রোপচারের ঘটনায় ভুয়া চিকিৎসক রাজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিরাময় ক্লিনিকের মালিক, ভুয়া চিকিৎসক অঞ্জুন চক্রবর্তী ওরফে রাজন দাস, নার্স ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অঞ্জন চক্রবর্তীর আত্মসমর্পণের পর সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে এ সময় নিরাময় ক্লিনিকের মালিক আনিসুর রহমান, ভুয়া চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদার ওরফে মিশু সিকদারও উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সামসাদ। পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামসুদ্দিন বাবু। ভুল অস্ত্রোপাচারের শিকার বরিশালে মাকসুদা বেগমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক।

ক্লিনিকের পরিচালক ও নার্সের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম। চিকিৎসকের সহকারী তোফায়েল সিকদারের (মিশু সিকদার) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আইলাদ হোসেন। আর ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন নুরুল ইসলাম সুজন ও গোলাম নবী। পরে শামসুদ্দিন বাবু সাংবাদিকদের বলেন, কথিত রাজন দাসের বিরুদ্ধে বাউফল থানায় একটি মামলা আছে। তাকে সে মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে শাহবাগ থানায় পাঠিয়ে দিতে বলেছে আদালত। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বাউফল থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এর আগে ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর গত ৬ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে হাইকোর্টে হাজির করতে বাউফল থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে ১৫ নভেম্বর বাউফল থানার ওসি আদালতকে জানান, চেষ্টা করেও তারা ভুয়া চিকিৎসক রাজন দাসকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ওইদিন আদালত রাজন দাসকে গ্রেফতারে ওসিকে প্রয়োজনে র্যাবের সহযোগিতা নেয়ার কথা বলেন এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তাকে হাজির করতে বলা হয়।

রবিবার রাজনের আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার তাকে হাজির করতে বলেন আদালত। কিন্তু সেই ভুয়া চিকিৎসক নিজেই সোমবার আদালতে আত্মমর্পণ করলে আদালত এই আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা। তিনি জানান, ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিন মাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মাকসুদা বেগমের (২৫) পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে। মুমূর্ষু ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালিতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে।

মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। মাকসুদার মা রোকেয়া বেগম বলেন, গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদাকে নিরাময় ক্লিনিকে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে তার একটি মেয়ে হয়। কয়েকদিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারও ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুইমাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে।

গত জুনে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে তাকে ডাক্তার দেখানো হয়। তখন আলট্রাসনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়েনি। এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।

এ ঘটনায় ২৩ জুলাই পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে তলব করে রুল জারি করেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ। ১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় তাদের। রুলে ওই ঘটনায় কেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চান হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ৯ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছে ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। সে প্রতিবেদনেই চিকিৎসক রাজন দাসের লাইসেন্সটি ভুয়া হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে।

Be the first to comment on "ভুয়া ডাক্তার রাজনকে থানায় সোপর্দ করার নির্দেশ হাইকোর্টের"

Leave a comment

Your email address will not be published.




19 − 13 =